দেশের শেয়ারবাজারকে এবার বিদেশে ও দেশের মধ্যে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ব্রোকারেজ হাউসগুলো চাইলে এখন দেশের মধ্যে ইউনিয়ন, সিটি করপোরেশন ও পৌর সদর এলাকায় ব্রোকারেজ হাউসের ডিজিটাল বুথ খুলতে পারবে। একইভাবে বিদেশেও বুথ খুলতে পারবে ব্রোকারেজ হাউসগুলো। গতকাল সোমবার এ–সংক্রান্ত নীতিমালা ও আদেশ জারি করেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
বিএসইসি বলছে, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ ও শেয়ারবাজারের উন্নয়নের কথা চিন্তা করে এ ডিজিটাল বুথ খোলার অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষের সম্মতি সাপেক্ষে বিএসইসি এ বুথ খোলার অনুমোদন দেবে।
২০১০ সালে শেয়ারবাজারে ধস নামার পর থেকে বিএসইসি ব্রোকারেজ হাউসের শাখা খোলার অনুমোদন বন্ধ করে দেয়। তবে নতুন ব্রোকারেজ হাউসকে শাখা খোলার অনুমোদন দিয়েছে। এর আগে ২০০৭, ২০০৮ ও ২০০৯ সালে দেশজুড়ে ব্রোকারেজ হাউসের শাখা খোলার তুমুল হিড়িক পড়ে যায়। তাতে শেয়ারবাজার সম্পর্কে না জেনে, না বুঝে দলে দলে লোক বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) হিসাব খুলে শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু করে। এতে একপর্যায়ে হু হু করে বাড়তে থাকে শেয়ারের দাম। তারই একপর্যায়ে ২০১০ সালের ডিসেম্বরে বাজারে ধস নামে।
শেয়ারবাজার ধসের ১০ বছর পর সাম্প্রতিক সময়ে শেয়ারবাজারে নতুন করে আবার গতি সঞ্চার হয়েছে। তাই নতুন করে ইউনিয়ন, সিটি করপোরেশন ও পৌর সদর এলাকা এবং বিদেশে ব্রোকারেজ হাউসগুলোর বুথ খোলার অনুমোদন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি।
এ–সংক্রান্ত নীতিমালায় বলা হয়েছে, দেশের মধ্যে বুথ খোলার ক্ষেত্রে ১ লাখ ও বিদেশে বুথ খোলার ক্ষেত্রে ১০ লাখ টাকা স্টক এক্সচেঞ্জের কাছে জামানত রাখতে হবে সংশ্লিষ্ট ব্রোকারেজ হাউসকে। ইউনিয়ন পর্যায়ে বুথের মাধ্যমে দিনে একজন গ্রাহক সর্বোচ্চ ২ লাখ এবং সিটি করপোরেশন ও পৌর এলাকার বুথে দিনে সর্বোচ্চ পৌনে ৯ লাখ টাকার লেনদেন করতে পারবেন। আর বিদেশে স্থাপিত বুথের ক্ষেত্রে লেনদেনের এ সীমা সংশ্লিষ্ট দেশের আইন অনুযায়ী নির্ধারিত হবে।
দীর্ঘদিন ধরে স্টক এক্সচেঞ্জ ও বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউসের পক্ষ থেকে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে শাখা খোলার অনুমোদন দেওয়ার দাবি জানানো হচ্ছিল। এম খায়রুল হোসেনের নেতৃত্বাধীন বিগত কমিশন এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। গত মে মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলামের নেতৃত্বে বিএসইসি পুনর্গঠনের পর বাজারে গতি ফিরে আসে। আর এ অবস্থায় নতুন কমিশন শেয়ারবাজারকে পুরোপুরি ডিজিটালাইজড করার নানা উদ্যোগ নেয়। তারই অংশ হিসেবে ডিজিটাল বুথ চালুর নীতিমালা ও আদেশ জারি করা হয়।
বিএসইসির এ সিদ্ধান্তকে ব্রোকারদের একটি অংশ ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। আরেকটি অংশ এ বিষয়ে নিশ্চুপ। গতকাল বিষয়টি নিয়ে দুই স্টক এক্সচেঞ্জের একাধিক পরিচালকের সঙ্গে কথা হয়। কিন্তু কেউ নাম প্রকাশের শর্তে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
জানতে চাইলে বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, ‘ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত শেয়ারবাজার নিয়ে সময় ও বাস্তবতা এখনো তৈরি হয়নি। বড়জোর বড় শহরে এ ধরনের বুথ করার অনুমোদন দেওয়া যেতে পারে। বিদেশি বুথ স্থাপনের উদ্যোগের বিরোধিতা এখনই করছি না। এর মাধ্যমে যদি বিদেশ থেকে বিনিয়োগ আসে, সেটি ভালো। তবে পরীক্ষামূলকভাবে কয়েকটি দেশে এ ধরনের বুথ করার পর তার ফলাফলের ভিত্তিতে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়ার পক্ষে আমি।’