ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সির চার বছরে যুক্তরাষ্ট্র প্রথাগত পররাষ্ট্রনীতির অবস্থান থেকে অনেকখানিই দূরে সরে গেছে। এই সময়ে ট্রাম্প প্রশাসন এমন সব পদক্ষেপ নিয়েছে, যা ওয়াশিংটনের দিক থেকে আগে কখনো ভাবা যেত না। এ ক্ষেত্রে জেরুসালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতির বিষয়টি উল্লেখ করলেই বোঝা যায়, কতটা ভিন্ন পথে হেঁটেছে ওয়াশিংটন। ডোনাল্ড ট্রাম্প ফের ক্ষমতায় এলে এই ধারা অব্যাহত থাকবে নিঃসন্দেহে। প্রশ্ন হলো বাইডেন ক্ষমতায় এলে কী করবেন? এখন পর্যন্ত তাঁর প্রতিশ্রুতি যেমন, তাতে তিনি পুরোনো পথে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে নেওয়ার পথেই হাঁটবেন বলে মনে হচ্ছে।

জো বাইডেন এরই মধ্যে বলেছেন, আগামী মঙ্গলবার (৩ নভেম্বর) তিনি বিজয়ী হলে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিতে তিনি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন নিয়ে আসবেন। বাইডেন ঘনিষ্ঠ ও তাঁর কাজের ধারা সম্পর্কে জানেন এমন ব্যক্তিদের বরাত দিয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন বলছে, ক্ষমতায় এলে দ্রুততার সঙ্গে তিনি ইরান ইস্যুতে মার্কিন নীতিতে পরিবর্তন আনবেন। একই সঙ্গে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিষয়েও পূর্বের অবস্থানে ফিরে যাবেন তিনি। এই তিনটি উদ্যোগই হবে তাঁর শুরুর উদ্যোগ।

সিএনএনের বিশ্লেষণে বলা হয়, ট্রাম্প যে একলা চলো নীতি নিয়েছিলেন, তা থেকে দ্রুততম সময়ে বের হয়ে আসাটাই হবে বাইডেনের লক্ষ্য। গত চার বছরে যুক্তরাষ্ট্রের দুর্বল হয়ে আসা আন্তর্জাতিক সম্পর্কগুলোকে ঝালাইয়ের লক্ষ্যে একটি নয়া কৌশল তিনি নেবেন। একই সঙ্গে এর অংশ হিসেবে তিনি মিত্রদের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন করবেন। নয়া কৌশলে গুরুত্ব পাবে জলবায়ু পরিবর্তন ও কোভিড-১৯ মোকাবিলার মতো বিষয়গুলো। আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও সমন্বয়ের দিকে থাকবে তাঁর মূল নজর।

বাইডেনের পররাষ্ট্রনীতি সম্পর্কিত উপদেষ্টা এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা প্রশাসনের সময়ে হোয়াইট হাউস ও পেন্টাগনের উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করা ব্রায়ান ম্যাককিয়নের মতে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘আমেরিকা প্রথম’ নীতি ‘নিঃসঙ্গ আমেরিকায়’ পর্যবসিত হয়েছে। বাইডেন বিজয়ী হলে, অফিসের প্রথম দিনেই তিনি গুরুত্বপূর্ণ মিত্রদের ফোন করবেন এবং বলবেন, ‘আমেরিকা ফিরে এসেছে এবং আপনাদের সঙ্গেই আছে আমেরিকা।’

কথা হলো এ তো গেল জো বাইডেনের সম্ভাব্য পররাষ্ট্রনীতির একেবারে মূল প্রবণতার কথা। কিন্তু বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে বাইডেনের অবস্থান আদতে কেমন হবে বা হতে পারে? এ ক্ষেত্রে অন্তত কিছু ক্ষেত্রে আগে থেকে অনুমান করা সম্ভব। সিএনএনের বিশ্লেষণে এমন কিছু ক্ষেত্রের উল্লেখ রয়েছে—

মিত্রদের সঙ্গে আলোচনায় ফেরা

জো বাইডেন এ বিষয়ে সিএনএনের সাংবাদিক জ্যাক ট্যাপারকে সরাসরি বলেছেন, ‘গত চার বছরে ক্ষমতায় থাকাকালে ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি মিত্র দেশকে উত্ত্যক্ত করেছেন। খোঁচাখুঁচি করেছেন। একই সঙ্গে বিশ্বের কর্তৃত্ববাদী ও সরাসরি স্বৈরশাসক হিসেবে কুখ্যাতি রয়েছে—এমন নেতাদের প্রতি প্রকাশ্যে অনুরাগ দেখিয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের বন্ধুদের হারিয়েছি।’

গত সেপ্টেম্বর মাসে বলা বাইডেনের এ কথা খুব গুরুত্বপূর্ণ। চেনা মিত্রদের সঙ্গে পুরোনো সম্পর্ক নবায়নের সুস্পষ্ট ইঙ্গিত রয়েছে এ কথায়। এ বিষয়ে বাইডেনের পররাষ্ট্রনীতি সম্পর্কিত উপদেষ্টারা বলেন, মিত্রদের সঙ্গে অংশীদারত্বের মাধ্যমেই যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তাকে সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী ও কার্যকর রাখা সম্ভব বলে বিশ্বাস করেন বাইডেন।

এ বিষয়ে ব্রায়ান ম্যাককিয়ন সিএনএনকে বলেন, ‘বন্ধু ও জোটের এমন এক নেটওয়ার্ক আমাদের রয়েছে, যা চীনাদের নেই, রুশদের নেই। এসব মিত্র ও জোটগুলো নিয়ে যখন আমরা একযোগে কাজ করি, তখনই আমরা সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী থাকি।

আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক নবায়ন

যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে পরীক্ষিত ও দীর্ঘস্থায়ী মিত্রদের সঙ্গে ডোনাল্ড ট্রাম্প আমলে সম্পর্কের অবনমন ঘটেছে। দীর্ঘস্থায়ী বিভিন্ন মিত্রের সঙ্গে সম্পর্ক ও এ-সংক্রান্ত মার্কিন মূল্যবোধকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রকাশ্যে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। বিশেষত ন্যাটো, জার্মানি, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের সঙ্গে সম্পর্কের ব্যাপক অবনতি হয়েছে গত চার বছরে। ইরানের সঙ্গে হওয়া ছয় জাতি পরমাণু চুক্তি থেকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করেছেন। একই সঙ্গে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ জাতিসংঘের বেশ কয়েকটি সংস্থা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নিয়েছে তাঁর প্রশাসন।

এই প্রেক্ষাপটে বাইডেন ক্ষমতায় এলে তিনি প্রথম বছরেই ‘গণতন্ত্রের জন্য সম্মেলন’ আয়োজন করবেন বলে তিনি সম্প্রতি মার্কিন পত্রিকা ফরেইন অ্যাফেয়ার্সে প্রকাশিত তাঁর এক নিবন্ধে উল্লেখ করেছেন। এতে বলা হয়, এই সম্মেলনের উদ্দেশ্য হবে বিশ্বের গণতান্ত্রিক শুক্তিগুলোকে এক মঞ্চে নিয়ে এসে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার শক্তিশালীকরণ। একই সঙ্গে যারা এই গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে, তাদেরকে সঠিক পথে নিয়ে আসা। একটি যৌথ লক্ষ্যকে সামনে এগিয়ে যাওয়াই এর উদ্দেশ্য। এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্যই হবে দুর্নীতি, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও কর্তৃত্ববাদের বিরুদ্ধে লড়াই।

জলবায়ু সংকট

সারা বিশ্বের সামনে এখন সবচেয়ে বড় যে সমস্যা হাজির, তা হলো জলবায়ু পরিবর্তন। বাইডেন এরই মধ্যে ঘোণা করেছেন, নির্বাচিত হলে তিনি প্যারিস জলবায়ু চুক্তির সঙ্গে আবার যুক্ত হবেন। ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম দিনেই তিনি এটি করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। একই সঙ্গে গোটা বিশ্বকে এই সমঝোতাকে এগিয়ে নিতে ঐক্যবদ্ধ করতে কাজ করবেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প এই প্যারিস জলবায়ু চুক্তিকে ‘এখন পর্যন্ত হওয়া সবচেয়ে বড় অঘটন’ হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন। বাইডেন ঠিক বিপরীত পথেই হাঁটবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

গত বছর সিএনএন আয়োজিত টাউনহল মিটিংয়ে জো বাইডেন বলেছিলেন, ক্ষমতায় এলে তিনি বিশ্বের সবগুলো দেশকে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় দেওয়া তাদের প্রতিশ্রুতিকে আরও সম্প্রসারিত করার আহ্বান জানাবেন। তাঁর মতে, ‘গত তিন বছরে এ সম্পর্কিত বিজ্ঞান সম্পর্কে আমরা অনেক কিছু জেনেছি। আমরা জেনেছি, আরও কী কী ঘটতে যাচ্ছে এবং আমাদের হাতে একদমই সময় নেই।’

শুধু তাই নয় ক্ষমতা গ্রহণের পর এ বিষয়ে বাইডেন বেশ কয়েকটি নির্বাহী আদেশ জারির প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন, যা ওবামা-বাইডেন সময়ে দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলোকে ছাড়িয়ে যাবে। একই সঙ্গে চীনের কয়লা ব্যবহার এবং তার বিভিন্ন ব্যবসার কারণে বিভিন্ন দেশে হওয়া কার্বন দূষণের রাশ টেনে ধরতেও কাজ করবেন বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বাইডেন।

ইরান

নির্বাচনী প্রচারের একেবারে শুরুর দিকেই বাইডেন বলেছেন, ক্ষমতায় গেলে তিনি ইরানের সঙ্গে হওয়া ছয় জাতি চুক্তিতে ফেরত যাবেন, যদি ইরান চুক্তি অনুযায়ী কাজ করতে সম্মত হয়। তবে এমন পদক্ষেপের জন্য বাইডেনকে আগে যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্রদের সঙ্গে বসতে হবে এবং নতুন একটি আলোচনা শুরুর প্রক্রিয়ায় প্রবেশ করতে হবে বলে মনে করেন তাঁর উপদেষ্টারা।

গত বছর পররাষ্ট্রনীতি সম্পর্কিত এক বক্তৃতায় জো বাইডেন বলেছিলেন, ‘তেহরান যদি চুক্তি মেনে চলতে রাজি থাকে, তবে আমি চুক্তিতে ফেরত যাব এবং একে আরও প্রসারিত ও শক্তিশালী করতে আমাদের মিত্রদের সঙ্গে কাজ করব। একই সঙ্গে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে—এমন সব কাজ থেকে ইরানকে বিরত রাখতে কার্যকর পদক্ষেপ নেব।’

তবে এ কাজটি অনেক কঠিন হবে। কারণ, ইরানের বিরুদ্ধে ট্রাম্প প্রশাসনের নেওয়া সর্বোচ্চ চাপের নীতি গ্রহণের পর গত বছর ইরান ঘোষণা করে—চুক্তিতে উল্লিখিত বিধি-নিষেধ তারা আর মেনে চলবে না।

কোভিড-১৯ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা

বাইডেন জয়ী হলে যেসব নীতি দ্রুত পরিবর্তন হবে বলে মনে করা হচ্ছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের ফিরে যাওয়া। চলতি বছরের শুরুর দিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেন, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ত্যাগ করছে।

বাইডেনের উপদেষ্টাদের বরাত দিয়ে সিএনএন জানায়, বাইডেন ডব্লিউএইচও পুনর্গঠনে কাজ করবেন। একই সঙ্গে মহামারি থেকে বিশ্বকে সুরক্ষিত রাখতে চীন যেন আন্তর্জাতিক সব প্রোটোকল মেনে চলে, তা নিশ্চিতে তিনি কাজ করবেন। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের ফেরা ও সংস্থাটির জবাবদিহি নিশ্চিতের বিষয়টি কীভাবে করা হবে, তা ধীরে ধীরে ঠিক করা হবে। পাশাপাশি চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের যেসব স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের ট্রাম্প প্রশাসন ফিরিয়ে এনেছে, তাদের আবার বহাল করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন বাইডেন, যাতে তাঁরা মহামারি-সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি এর মোকাবিলায় কাজ করতে পারেন। একই সময়ে দেশের ভেতরে সব মার্কিন যেন ভ্যাকসিন গ্রহণ করেন, সে বিষয়ে বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়া হবে। কোভিড মোকাবিলায় বিভিন্ন দেশের গবেষক ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে এক জোট হয়ে কাজ করবেন মার্কিন বিজ্ঞানীরা।

চীন

বর্তমান বিশ্বে চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কই সবচেয়ে বেশি সংবেদশীল। এই সম্পর্ক খুবই সতর্কতা দাবি করে। বাইডেনকেও এই কঠিন কাজটি করতে হবে। বাইডেন ও তাঁর উপদেষ্টারা বলছেন, ট্রাম্প জমানায় চীনের সঙ্গে যেভাবে আচরণ করা হয়েছে, মিত্রদের সঙ্গে কোনো আলোচনা ছাড়াই যে পন্থায় চাপ প্রয়োগ করা হয়েছে, তাতে চীনের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় যুক্তরাষ্ট্র পিছিয়েছে। বাইডেনের মতে, এমন বহু ক্ষেত্র রয়েছে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন একযোগে কাজ করতে পারে। এ ক্ষেত্রে উত্তর কোরিয়া ও জলবায়ু পরিবর্তন উল্লেখযোগ্য। পাশাপাশি প্রযুক্তি, হুয়াওয়ে, ফাইভ-জি, মেধাস্বত্ব ও এশিয়ার জলসীমায় চীনের সম্প্রসারণ তৎপরতার বিরুদ্ধে এবং এই সমস্যাগুলোর নিরসনে মিত্রদের সঙ্গে নিয়ে তিনি কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন।

চীন সম্পর্কে জনপরিসরে দেওয়া বাইডেনের প্রতিশ্রুতি অনেকটাই সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা প্রশাসনের সময়ে নেওয়া নীতির সঙ্গে মেলে। এই নীতি অনুযায়ী, চীনকে বাদ দিয়ে নয়, তাকে যুক্ত করেই এগোতে হবে, যাতে তারা আন্তর্জাতিক আইন ও রীতি মেনে চলার ব্যাপারে আরও নিষ্ঠ হয়। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় চীনের সংযুক্তির সময়ও কিন্তু বাইডেন বিষয়টিকে সমর্থন করেছিলেন। সেই সময়ের এই সমর্থনের বিষয়ে সম্প্রতি সিএনএনের সাংবাদিক জ্যাক ট্যাপারকে বাইডেনকে বলেন, ‘চীন সমৃদ্ধ হোক—এটাই আমরা চেয়েছিলাম। চীনের সঙ্গে আমরা কোনো যুদ্ধ চাই না।’

রাশিয়া

রাশিয়ার সঙ্গে থাকা নিউ স্টার্ট ট্রিটি নামে পরিচিত পারমাণবিক শক্তি সম্প্রসারণ নিরোধ সম্পর্কিত সর্বশেষ চুক্তিটির মেয়াদ আসন্ন নির্বাচনের পরপরই শেষ হচ্ছে। আগামী বছরের ২০ জানুয়ারি নতুন প্রেসিডেন্ট অভিষিক্ত হবেন। আর চুক্তিটির মেয়াদ শেষ হবে ২০২১ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি। ট্রাম্প প্রশাসন যদি এর নবায়ন করতে ব্যর্থ হয়, তবে বাইডেন প্রশাসনের অগ্রাধিকার তালিকায় থাকবে এই চুক্তির সম্প্রসারণ।

তবে এত অল্প সময়ে এমন একটি চুক্তি সম্পাদন করা যাবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। নবায়ন না করা গেলে কী হবে? দ্বিতীয় প্রেসিডেনশিয়াল বিতর্কে বিষয়টি উত্থাপিত হলে বাইডেন বলেন, সে ক্ষেত্রে মিত্রদের সঙ্গে নিয়ে রাশিয়ার আগ্রাসন ও ভুয়া তথ্য বিস্তারের বিরুদ্ধে লড়বেন তিনি। মার্কিন নির্বাচনে হস্তক্ষেপের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, মস্কোকে এর মূল্য দিতে হবে। একই সঙ্গে তিনি রাশিয়াকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘সবচেয়ে বড় হুমকি’ হিসেবেও উল্লেখ করেন।

আফগানিস্তান

আফগানিস্তানের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ নীতি সম্পর্কে বাইডেনের উপদেষ্টারা বলেন, সেখানে সামরিক উপস্থিতি কমানোর পাশাপাশি আফগানিস্তানের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রাখা হবে। তবে এ কাজটি কীভাবে করা হবে, সে সম্পর্কে তাঁরা বিস্তারিত কিছু বলতে পারেননি। যুক্তি হচ্ছে, ট্রাম্প প্রশাসনের পর বাইডেন ক্ষমতায় এলে তিনি সেখানে কী পরিস্থিতির মুখোমুখি হন, তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। ফলে ট্রাম্প প্রশাসনের মতো বাইডেন প্রশাসনও তালেবানদের সঙ্গে মার্কিন প্রতিনিধিদের সরাসরি কাজ করতে সবুজ সংকেত দেবে কিনা, তা আগে থেকে বলা যাচ্ছে না।

বাইডেনের উপদেষ্টাদের বরাত দিয়ে সিএনএন জানায়, ওবামা প্রশাসনের সময়ও ২০০৯ সালে আফগানিস্তানে সামরিক শক্তি বৃদ্ধি ও ২০১১ সালে লিবিয়া আক্রমণের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছিলেন বাইডেন।

বাইডেন উপদেষ্টাদের এই বক্তব্যের সমর্থন পাওয়া যায় সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সাম্প্রতিক বক্তব্যে। ওবামার মতে, সামরিক শক্তি প্রয়োগের বিষয়ে পররাষ্ট্রনীতি সম্পর্কিত উপদেষ্টাদের মধ্যে বাইডেনকেই তাঁর সবচেয়ে বেশি সহনশীল ও নিস্পৃহ মনে হয়েছে।

ব্রায়ান ম্যাককিয়ন, জো বাইডেনের পররাষ্ট্রনীতি সম্পর্কিত উপদেষ্টা

ইয়েমেন

ইয়েমেন ইস্যুতে বাইডেনের অবস্থান ডোনাল্ড ট্রাম্পের একেবারে বিপরীত। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, ক্ষমতায় এলে বাইডেন ইয়েমেন হামলায় সৌদি আরবকে দেওয়া সব মার্কিন সমর্থন প্রত্যাহার করবেন। মার্কিন কংগ্রেসের বহু সদস্যই এই যুদ্ধে সৌদি আরবকে দেওয়া মার্কিন সমর্থনের বিরোধিতা করেছেন এবং করছেন।

ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল

এ ক্ষেত্রে বাইডেন ঘনিষ্ঠরা যা বলছেন, তা ট্রাম্পের নীতি থেকে আলাদা। ট্রাম্প প্রশাসনের সময় যুক্তরাষ্ট্র এই ইস্যুতে বেশ কিছু বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যেখানে জেরুসালেমে মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তর ও জেরুসালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী ঘোষণার মতো সিদ্ধান্তও রয়েছে। এই সিদ্ধান্তকে অন্যগুলোর মতো উল্টে দেওয়াটা তুলনামূলক কঠিন হবে।

এ বিষয়ে বাইডেনের মত, ইসরায়েলে মার্কিন দূতাবাস আবার তেল আবিবে স্থানান্তর করা হবে না। তবে তিনি ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে মার্কিন প্রশাসনের সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করবেন। পূর্ব জেরুসালেমে ফিলিস্তিনিদের জন্য মার্কিন কনস্যুলেট খোলা হবে। ফিলিস্তিনিদের সরাসরি মার্কিন সহায়তা দেওয়া ও সেখানে কাজ করা

জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করবেন। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে প্যালেস্টিনিয়ান লিবারেশন অর্গানাইজেশনের (পিএলও) মিশন পুনঃস্থাপন ফিলিস্তিনকে সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন বাইডেন। ফিলিস্তিন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে এই কূটনৈতিক সম্পর্ক রদ করেছিলেন ট্রাম্প।

বাইডেনের উপদেষ্টা ব্রায়ান ম্যাককিয়ন সিএনএনকে বলেন, বাইডেন ইসরায়েল রাষ্ট্রের একজন সমর্থক এবং তিনি দেশটিকে সহায়তা দেবেন। একই সঙ্গে বাইডেন দুই রাষ্ট্র নীতিরও সমর্থক। এই নীতির বিরুদ্ধে যায়, এমন কোনো পদক্ষেপ তিনি নেবেন না।

সব মিলিয়ে জো বাইডেন ক্ষমতায় এলে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে পুনর্গঠনের দিকে এগোবেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের সময়ে এই মন্ত্রণালয় কূটনৈতিক শক্তি হারিয়েছে। এই শক্তি ফিরিয়ে আনতে মিত্র দেশগুলোকে সঙ্গে নিয়ে একযোগে কাজ করবেন। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আন্তর্জাতিক মহলের আস্থা ফেরাতে কাজ করবেন বাইডেন। এ কাজে তিনি কূটনীতিক ও আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে অভিজ্ঞ ও বিশেষজ্ঞদের মতকে গুরুত্ব দেবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *