বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি আছেন। গতকাল সোমবার ভোর থেকে শ্বাসকষ্ট অনুভব করায় বিকেলে তাঁকে হাসপাতালের কেবিন থেকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) স্থানান্তর করা হয়। এখন পর্যন্ত তিনি সেখানেই চিকিৎসা নিচ্ছেন।

করোনায় আক্রান্ত খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার কিছুটা অবনতি হওয়ায় তাঁর পরিবার ও দল চাইছে দলীয় চেয়ারপারসনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ নিতে। খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত একজন চিকিৎসক জানিয়েছেন, বিএনপির চেয়ারপারসন মূলত সিঙ্গাপুর ও লন্ডনে নিয়মিত চিকিৎসা নিতেন। তাঁর চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত চিকিৎসকেরা খালেদা জিয়ার অবস্থা সম্পর্কে ভালো জানতেন। এ কারণে দেশের বাইরে আরেকবার নিয়ে গেলে চিকিৎসাটা ভালো হতো। কেননা, খালেদা জিয়া নানা রোগে আক্রান্ত। তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া দুই বছরের বেশি কারাগারে ছিলেন। এক বছরের বেশি নিজের বাসায় অনেকটা বন্দিজীবনের মতোই কাটিয়েছেন। এ কারণে একটা থরো পরীক্ষা ও ট্রিটমেন্ট দরকার।’

এ মুহূর্তে চিকিৎসার জন্য কোন দেশে নেওয়ার কথা ভাবছেন, তা জানতে চাইলে ওই চিকিৎসক বলেন, সিঙ্গাপুরে। কেননা, লন্ডনে খালেদা জিয়া চোখের চিকিৎসা নিয়েছেন। কিন্তু নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা সিঙ্গাপুরে করিয়েছেন বেশি।

এদিকে খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার ব্যাপারে দল ও পরিবারের সদস্যরা তৎপর হয়েছেন। গতকাল সিসিইউতে নেওয়ার পর সন্ধ্যায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সঙ্গে কথা বলেছেন বলে বিএনপির সূত্রে জানা গেছে। অবশ্য সেখানে খালেদা জিয়াকে বিদেশ নেওয়ার ব্যাপারে সরাসরি কোনো কিছু বলা হয়নি। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল জানিয়েছেন, তিনি খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে সরকারকে জানিয়েছেন। তবে পরিবারের সদস্যরা মন্ত্রীর সঙ্গে কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন কি না, সে ব্যাপারে দলের পক্ষ থেকে কোনো কিছু জানানো হয়নি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্যের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে সরকারকে জানানো প্রয়োজন কেন? উত্তরে এই নেতা বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এখনো মুক্ত নন। তিনি সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্তি পেয়েছেন, জামিনে নয়। এ কারণে তাঁরা মনে করেছেন, বিষয়টি সরকারকে জানানো দরকার। আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে জানিয়েছেন, কেননা খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওপর ন্যস্ত। সেখান থেকে ফাইল প্রধানমন্ত্রীর কাছে যায়।

তবে ওই নেতা বলেন, তাঁরা দলীয় চেয়ারপারসনের উন্নত চিকিৎসা চান। তাঁরা চান, সরকার খালেদা জিয়াকে বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দিক।

এদিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্ম সচিব জানিয়েছেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশ নেওয়ার ব্যাপারে দল বা পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো আবেদন করা হয়নি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও কয়েকজন সাংবাদিকের কাছে বলেছেন, বিদেশে নেওয়ার ব্যাপারে কোনো আবেদন পরিবার বা দল করেনি।

খালেদা জিয়ার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে গণমাধ্যমকে জানাতে গিয়ে তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক দলের সদস্য ও বিএনপি নেতা এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেছেন, খালেদা জিয়ার অবস্থা স্থিতিশীল। তিনি এখন স্বাভাবিক শ্বাসপ্রশ্বাস নিচ্ছেন।
নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়ার মুক্তির শর্তে বলা হয়েছে, তিনি বিদেশ যেতে বা বিদেশে চিকিৎসা নিতে যেতে পারবেন না। তবে দেশের ভেতরে যেকোনো হাসপাতালে তিনি চিকিৎসা নিতে পারবেন।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *