চট্টগ্রাম নগরে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ-হামলার ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে।
গতকাল সোমবার রাতে নগরের কোতোয়ালি থানায় এই মামলা হয়। একটি মামলা হয়েছে পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে। অন্যটি বিস্ফোরকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে। দুটি মামলারই বাদী পুলিশ।
মামলা হওয়ার তথ্য আজ মঙ্গলবার সকালে প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নেজাম উদ্দিন। তিনি বলেন, মামলায় ৫৭ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া ৫০ থেকে ৬০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।
কোতোয়ালি থানার পুলিশ জানায়, মামলায় চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেনসহ শীর্ষ নেতাদের আসামি করা হয়েছে।
ওসি নেজাম উদ্দিন বলেন, ঘটনাস্থলে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। দুই মামলায় ইতিমধ্যে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শাহাদাত হোসেন, নগর মহিলা দলের সভাপতি মনোয়ারা বেগমসহ ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের আজ আদালতে উপস্থাপন করে সাত দিন করে রিমান্ডের আবেদন জানানো হয়।
গতকাল বিকেলে নগরের নাসিমন ভবনে নগর বিএনপির কার্যালয়ের সামনে দলটির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ-হামলার ঘটনা ঘটে। এতে পুলিশসহ অন্তত ২১ জন আহত হন। এ সময় বিএনপির নেতা-কর্মীরা রাস্তায় টায়ার পোড়ান। আসবাবপত্রে আগুন দেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ফাঁকা গুলি ছোড়ে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্র জানায়, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল নগর বিএনপির সদস্যসচিব আবুল হাশেম বক্করের নেতৃত্বে একটি বিক্ষোভ মিছিল নগরের তিন পুলের মাথা থেকে দলীয় কার্যালয়ের সামনে এসে সড়কের ওপর সমাবেশ করে। এ সময় উপস্থিত কিছু পুলিশ সদস্য তাদের সমাবেশ শেষে জড়ো হতে না দিয়ে দলীয় কার্যালয়ের পাশের রাস্তা দিয়ে চলে যেতে বলেন। এদিকে সমাবেশ শেষ হওয়ার পরপরই নগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আবু সুফিয়ানের নেতৃত্বে আরেকটি বিক্ষোভ মিছিল নগরের কাজীর দেউড়ি থেকে দলীয় কার্যালয়ের সামনে আসে। সেটিও সড়কের ওপর সমাবেশ করতে থাকে। তখন উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা বাধা দিলে ক্ষিপ্ত হয়ে যান বিএনপির নেতা-কর্মীরা। তাঁরা পুলিশ সদস্যদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ফাঁকা গুলি ছোড়ে। একপর্যায়ে পুলিশ সদস্যদের দলীয় কার্যালয়ের পাশে একটি অফিসে ধাওয়া দিয়ে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়।
ইতিমধ্যে কোতোয়ালি থানা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য এসে ফাঁকা গুলি ছুড়তে থাকেন। রাস্তায় থাকা বিএনপির নেতা-কর্মীরা টায়ার পুড়িয়ে, রাস্তার পাশে থাকা চা-দোকানের চেয়ার-টেবিলে আগুন ধরিয়ে দেন। এতে কাজীর দেউড়ি থেকে নাসিমন ভবন পর্যন্ত যান চলাচল বন্ধ থাকে। কয়েক দফায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। অতিরিক্ত পুলিশ আসার পর বিএনপির নেতা-কর্মীরা রাস্তা ছেড়ে দেন।
পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষের পর দলটির মহানগর কমিটির আহ্বায়ক শাহাদাত হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গতকাল সন্ধ্যায় তাঁর ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠান নগরীর প্রবর্তক এলাকার ট্রিটমেন্ট সেন্টার থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
গ্রেপ্তারের পর নগর পুলিশ কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর বলেন, শাহাদাত হোসেনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও হুমকির অভিযোগে ফৌজদারি মামলা রয়েছে। এ ছাড়া গতকাল বিকেলে পুলিশের ওপর হামলা, রাস্তায় আগুন ও ভাঙচুরের ঘটনায়ও তিনি জড়িত। এ জন্য তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গ্রেপ্তারের পর শাহাদাতকে কোতোয়ালি থানায় নেওয়া হয়।
গত জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন শাহাদাত। পরে নির্বাচন কমিশনার ও বর্তমান মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরীকে আসামি করে আদালতে মামলা করেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *