চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শিরীণ আখতারের বিরুদ্ধে বিজ্ঞপ্তি ও পরীক্ষা ছাড়াই ১৫ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে আরও ১২ জনকে নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন তিনি।
অভিযোগ উঠেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তার পছন্দ, ছাত্রলীগ নেতা, বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক ও কর্মকর্তার সুপারিশে এই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। খণ্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগও চলছে একই প্রক্রিয়ায়। ‘বিতর্কিত’ এই নিয়োগ নিয়ে শিক্ষকদের অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
অবশ্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি, নিয়ম মেনেই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ। পবিত্র রমজান, শবে কদর ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গত ১০ থেকে ২০ মে পর্যন্ত ক্যাম্পাসও বন্ধ ছিল। এই বন্ধের মধ্যেই অফিস সহকারী ও গ্রন্থাগার সহকারী হিসেবে দুজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এর আগে ২৩ মে ৭ জনকে ৯ হাজার টাকা বেতনে ৬ মাসের জন্য অস্থায়ী ভিত্তিতে ‘পাম্প সহকারী’ পদে নিয়োগ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পাম্প সহকারী পদে নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা হলেন শাহরিয়ার ইসলাম, ছানা উল্লাহ, মো. বেলাল হোসেন, মো. আবদুল মুকিত, ইসমাইল হোসেন, মোহাম্মদ নোমান এবং মো. মোরশেদ। তাঁদের মধ্যে শাহরিয়ার ও ছানা উল্লাহর বাড়ি কক্সবাজারের রামু উপজেলায়। উপাচার্য শিরীণ আখতারের বাড়িও ওই এলাকায়। এ ছাড়া বেলাল হোসেন উপাচার্যের বাসভবনের কর্মচারী মোহাম্মদ হারুনের ছেলে। আবদুল মুকিত বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ ক্যাম্পাস এলাকার কাপড়ের দোকানদার।
এর আগে গত বছরের জুনে ভারপ্রাপ্ত নিরাপত্তা কর্মকর্তা পদে একজন ও ডিসেম্বরে নিরাপত্তাকর্মী পদে আরও পাঁচজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।
গত মাসে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য সাবেক উপাচার্য এম আবদুস সোবহানের শেষ কর্মদিবসে অবৈধভাবে ১৩৮ জনের নিয়োগের সমালোচনার মধ্যেই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এই নিয়োগের ঘটনা প্রকাশিত হলো। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরীর আমলেও এমন নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিল।
পরীক্ষা ছাড়াই শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে ১২ জনকে নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। নিয়োগের ক্ষেত্রে লিখিত কিংবা মৌখিক পরীক্ষার কোনোটিই নেওয়া হয়নি। বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করা হয়নি। ১২ জনের মধ্যে ৩ জন ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাঁরা হলেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক শরিফুল ইসলাম, সাবেক সদস্য মোহাম্মদ পারভেজ ও ছাত্রলীগের কর্মী অনুপম রুদ্র।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কলেজের পরিচালনা কমিটির এক সদস্য বলেন, প্রথমে কথা হয়েছিল পরিচালনা কমিটি যাচাই-বাছাই করে নিয়োগ দেবে। কিন্তু তা হয়নি।
খণ্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগ কমিটিতে সভাপতি ছিলেন উপাচার্য শিরীণ আখতার। এ ছাড়া কমিটিতে আরও ছিলেন রেজিস্ট্রার এস এম মনিরুল হাসান, প্রক্টর রবিউল হাসান ভূঁইয়া, ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ মাহবুবুল হক ও কলেজের অধ্যক্ষ শামসাদ বেগম চৌধুরী।
নিয়োগসংক্রান্ত অভিযোগ বিষয়ে জানতে উপাচার্যকে ফোন করলেও তিনি ধরেননি। তবে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এস এম মনিরুল হাসান বলেন, কারও না কারও সুপারিশের মাধ্যমেই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েই এভাবে নিয়োগ হয়।
তবে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি ও আইন বিভাগের অধ্যাপক জাকির হোসেন বলেন, এসব নিয়োগ আইন মেনে হয়নি। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে সেখান থেকে অধিকতর যোগ্য ব্যক্তিকে বেছে নেওয়া যেত।
ইউজিসির নির্দেশনা মানা হয়নি
২০২০ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে তাদের অনুমতি ব্যতীত অ্যাডহক, দৈনিকভিত্তিক জনবল ও মাস্টাররোলে নিয়োগ না দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছিল। কিন্তু এসব পদে নিয়োগ দিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ইউজিসির অনুমোদন নেয়নি।
অবশ্য ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মনিরুল হাসান বলেন, ইউজিসির আরেকটি নির্দেশনায় বলা আছে, ২০১৮-১৯ এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে অবসরজনিত, স্বেচ্ছায় অবসরজনিত, পদত্যাগ ও মৃত্যুজনিত কারণে পদ শূন্য হলে ওই সব পদে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিয়োগ দিতে পারবে। ফলে জরুরি ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে গিয়ে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া যায়নি।
ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক কাজী শহীদুল্লাহ বলেছেন, এ ধরনের নিয়োগ দিতে ইউজিসির অনুমতি নিতে হবে। কিন্তু সেটি নেয়নি। তাই ইউজিসির পক্ষ থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হবে।