গত ডিসেম্বর মাসের আট তারিখে রাজধানীর ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেটের দোকানগুলো নকশা বহির্ভূত এমন অভিযোগে ৯১১টি দোকান উচ্ছেদ করা হয়।

এই উচ্ছেদ অভিযানের নেতৃত্ব দেন বর্তমান মেয়র ফজলে নূর তাপস।

কিন্তু সেই সময়ে ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনকে দেয়া টাকার বিনিময়ে ঐসব দোকান বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

ব্যবসায়ীরা কাগজপত্র দেখান যেখানে পাঁচটা পে অর্ডারের মাধ্যমে প্রায় ৩৫ কোটি টাকা দেয়া হয় সিটি করপোরেশনকে।

ডিসেম্বরে ঐ ঘটনা বেশ চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছিল।

ব্যবসায়ীরা এসব পে অর্ডার আদালতে দাখিল করলে আদালত সাঈদ খোকনের বিরুদ্ধে করা ব্যবসায়ীদের করা মামলাটি গ্রহণ করে।

আদালত সাঈদ খোকন, নগরভবনের আরো দুই কর্মকর্তাসহ মোট সাতজনের বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দেন পিবিআইকে।

এরপর থেকেই সাবেক এবং বর্তমান দুই মেয়রের মধ্যে বিবাদ সামনে চলে আসে। সাঈদ খোকন একাধিকবার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এই সব ঘটনার জন্য বর্তমান মেয়রকে দায়ী করেন।

ডিসেম্বরে গণমাধ্যমকে সাঈদ খোকন বলেন, এই অভিযান সিটি করপোরেশন পরিচালনা করেছে সেটা সম্পূর্ণ অবৈধ, দোকানদার যারা আছেন, মার্কেট যেখানে আছে সেটা বৈধ।

তিনি বলেন “আমি নিজে হাতে এসব দোকানদারদের কাগজপত্র দিয়ে এসেছি, বকেয়া রসিদ দিয়ে এসেছি। আমি আদালতের নির্দেশে আমাদের বোর্ড সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এই দোকানগুলোর নকশার সংশোধনপূর্বক দোকানদারদের কাছ থেকে টাকা জমার আহ্বান জানিয়েছি।

“তাদের কাছ থেকে ৭/৮ বছরের টাকা বকেয়া ছিল। আমরা সেই বকেয়া টাকা বুঝে নিয়ে রসিদ দিয়েছি এবং তাদেরকে ব্যবসা পরিচালনা করার অনুমতি দিয়েছি”।

তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের জন্য বর্তমান মেয়রকে দায়ী করেন।

গতকাল শনিবার ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী ও পরিবারবর্গের ব্যানারে একটি মানববন্ধন হয়। সেই মানববন্ধনে সাঈদ খোকন আক্রমণাত্মক বক্তব্য দেন মি. তাপসের বিরুদ্ধে।

এদিকে মি. খোকনের এমন আক্রমণাত্মক বক্তব্যের বিষয়ে রোববার সাংবাদিকরা মি. তাপসের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন “কেউ যদি ব্যক্তিগত আক্রোশের বশবর্তী হয়ে কোন কিছু বলে থাকেন সেটার জবাব আমি একটা দায়িত্বশীল পদে থেকে সমীচীন মনে করি না। যে অভিযোগ আনা হয়েছে কোনভাবেই কোন বস্তুনিষ্ঠ বক্তব্য না”।

আওয়ামী লীগ কীভাবে দেখছে?

দু’হাজার বিশ সালে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সময় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি তৎকালীন মেয়র সাঈদ খোকন।

আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দেয় ঢাকা-১০ আসনের সংসদ সদস্য শেখ ফজলে নূর তাপসকে।

তাপসের ছেড়ে দেয়া আসনে সাঈদ খোকন নির্বাচন করতে চাইলে সেটাও তাকে না দিয়ে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দেয় ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিনকে।

বর্তমানে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য হিসেবে আছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক এই মেয়র।

এর আগে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই আবদুল কাদের মীর্জার একটি বক্তব্য সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হলে আওয়ামী লীগ থেকে তার এই বক্তব্যকে স্থানীয় রাজনৈতিক বিরোধের ফসল হিসাবে দেখা হয়।

এখন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক ও বর্তমান দুই মেয়রের বিবাদ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা নুহ উল আলম লেনিন বলেন, এই দুইজন দায়িত্বশীল নেতা হিসেবে এবং জনপ্রতিনিধি হিসেবে তাদের যদি কোন বিষয়ে দ্বিমত থাকে, ভিন্নমত থাকে সেটা তারা পারস্পারিক আলোচনার মধ্যে দিয়ে এটার সমাধান করতে পারেন।

অথবা পার্টির উচ্চতর ফোরামে উত্থাপন করতে পারেন।

দলের মধ্যে এনিয়ে কোন অস্বস্তি আছে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “যেহেতু তাদের বেশ কিছু বিকল্প আছে, প্রকাশ্যে এই বিতর্কটা খুব শোভন না। পার্টির ডিসিপ্লিন মানতে হলে পার্টির অভ্যন্তরীণ বিষয় বাইরে যাবে না।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *