করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় বড় ধরনের ঘাটতি তৈরি হচ্ছে। অনলাইন-টিভিতে ক্লাসের ব্যবস্থা করা হলেও এর সুবিধা সব শিক্ষার্থী পাচ্ছে না। অনলাইন ক্লাস নিয়ে গ্রাম-শহরের মধ্যে বৈষম্য হচ্ছে। আবার অনলাইন ক্লাস সরাসরি ক্লাসের বিকল্প হতে পারছে না।এমন পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মানাসহ নিরাপদ পরিবেশে ক্লাসে ফিরতে নিজেদের প্রত্যাশার কথা জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা।
‘কোভিড-১৯ বাস্তবতায় নিরাপদে স্কুলে ফেরা: শিক্ষার্থীদের জিজ্ঞাসা’ শীর্ষক এক ভার্চ্যুয়াল সংলাপে দেশের বিভিন্ন এলাকার নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ৯ জন শিক্ষার্থী এসব কথা বলে। সেভ দ্য চিলড্রেনের উদ্যোগে গতকাল শনিবার বিকেলে এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। ভার্চ্যুয়াল এই সংলাপে সম্প্রচার সহযোগী ছিল প্রথম আলো।
সংলাপে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন জিজ্ঞাসার জবাব দেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ গোলাম ফারুক। তিনি বলেন, যখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হবে, তখন স্বাস্থ্যবিধি মেনেই খোলা যাবে।
মাউশির মহাপরিচালকের বক্তব্যের আগে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন প্রশ্ন করে ও তাদের মতামত তুলে ধরে। রাজধানীর হলিক্রস স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির ছাত্রী প্রতিভা প্রভা বলে, করোনাকালে অনলাইনে ক্লাস হলেও অনেকেই সেই সুবিধা ঠিকমতো পাচ্ছে না। আবার স্কুলে যেতে না পারায় সামাজিকীকরণও হচ্ছে না। মাস্ক পরা, তিন ফুট দূরত্ব বজায় রাখা, হাত ধোয়াসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারলে স্কুল খোলা সম্ভব হবে মনে করে সে।
বিদ্যমান পরিস্থিতিতে পড়াশোনায় ঘাটতি তৈরি হচ্ছে বলে জানায় বরিশালের সরকারি হাতেম আলী কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র কথক বিশ্বাস।
করোনা পরিস্থিতিতে তথ্যপ্রযুক্তির সুবিধা আরও বাড়ানো দরকার বলে মনে করে চট্টগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী মিনা আক্তার। তার পরামর্শ, সবাই যেন তথ্যপ্রযুক্তির সুবিধা সমানভাবে পায়। একই সঙ্গে তথ্যপ্রযুক্তির নিরাপদ ব্যবহার নিশ্চিত করা জরুরি বলে মনে করে সে।
অনলাইন ক্লাসে ভালোভাবে সবকিছু শেখা যায় না বলে মনে করে ধামরাই উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র শেখ সাদি।
খুলনা সরকারি মহিলা কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র সানজিদা বলল, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ময়লা-আবর্জনা জমেছে। এমনকি স্কুলের মাঠে গরু চরানো হচ্ছে। তাই এগুলো যেন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়।
বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র রাফসানজানি বলে, যখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হবে, তখন যেন পুরো পাঠ্যসূচি (সিলেবাস) চাপিয়ে না দেওয়া হয়। সংক্ষিপ্ত পাঠ্যসূচি যেন হয়।
অটো পাসের পক্ষে নয় সিলেটের জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র কাজী আবদুল হালিম।
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের ঠুটিয়া উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী চৌধুরী রাজিয়া সুলতানার পরামর্শ হচ্ছে, গ্রামাঞ্চলে যাদের বেশি প্রয়োজন, তাদের জন্য হলেও নিরাপদ ব্যবস্থা নিশ্চিত করে স্কুল খোলা উচিত।
রাজশাহীর নিউ ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র এমদাদুল হক বলে, গ্রামে ইন্টারনেট সংযোগেও সমস্যা। তাই কেবল অনলাইন ক্লাসের ওপর মূল্যায়ন বা পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেওয়া সঠিক হবে না।
অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করছে
শিক্ষার্থীদের বক্তব্যের পর মাউশির মহাপরিচালক সৈয়দ গোলাম ফারুক বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কবে খুলবে, তা কোভিড-১৯ পরিস্থিতিসহ অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করছে। কিন্তু কীভাবে খোলা হবে, তা এখন থেকেই ভেবে রাখা হচ্ছে। ইতিমধ্যে স্বাস্থ্যবিধিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে একটি পরিকল্পনা করা হয়েছে। স্কুল খোলার পরপর সেগুলো বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হবে।
যে পরিমাণ শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে, সেটা হবে না বলেই আশা প্রকাশ করেন মাউশির মহাপরিচালক। তিনি বলেন, ৪৬টি জেলার ১১৫টি উপজেলা থেকে শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট জমা দেওয়ার তথ্য সংগ্রহ করেছেন তাঁরা। তাতে দেখা গেছে, ৮৫ শতাংশ শিক্ষার্থী অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিয়েছে। আশা করা হচ্ছে, অন্তত এই ৮৫ শতাংশ শিক্ষার্থী ঝরে পড়বে না, বরং এর সঙ্গে আরও কিছু শিক্ষার্থী যুক্ত হবে। সারা দেশ থেকে মাধ্যমিক স্তরের জমা দেওয়া অ্যাসাইনমেন্টের নমুনা নিয়ে জাতীয়ভাবে একটি বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। এর ভিত্তিতে সামনের বছর থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শিক্ষার্থীদের নানা জিজ্ঞাসার জবাবে সৈয়দ গোলাম ফারুক বলেন, ইন্টারনেট সুবিধাসহ এসব বিষয় অবশ্যই মাথায় আছে। যে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ শিক্ষার্থী অনলাইন ও টিভির সুবিধা পায়নি, তাদের ঘাটতি পূরণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তবে এটা সত্য যে সরাসরি ক্লাসের বিকল্প অনলাইন নয়। সরাসরি ক্লাস না হলেও কীভাবে পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়া যায়, সে বিষয়ে মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে।