জন্মনিবন্ধনের মধ্য দিয়েই শুরু হবে দেশের সব নাগরিকের একক পরিচয় নম্বর—ইউআইডি (Unique ID)। জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে এ কার্ড দেওয়া শুরু হবে। তবে জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগ থেকে ১০ ডিজিট কার্ডের নম্বর সরবরাহ করা হবে। অপরদিকে যেসব নাগরিক ইতোমধ্যে ১০ ডিজিটের জাতীয় পরিচয়পত্র পেয়েছেন, সেটাই তাদের ইউআইডি হিসেবে গণ্য হবে। এক্ষেত্রে তাদের জন্মনিবন্ধন কার্ডটিও ওই ১০ ডিজিটের নম্বরে রূপান্তরিত হবে। এর বাইরে ১৮ বছরের অনূর্ধ্ব যাদের জন্মনিবন্ধন রয়েছে কিন্তু পরিচয়পত্র পাননি, তাদের জন্মনিবন্ধন নম্বরই ইউআইডি আকারে ১০ ডিজিটে রূপান্তর হবে।
নির্বাচন কমিশনের জাতীয় (এনআইডি) পরিচয়পত্র অনুবিভাগ ও সরকারের জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চলমান মুজিববর্ষকে কেন্দ্র করে আগামী বছরের জানুয়ারি থেকে ১০ ডিজিটের নম্বরে জন্মনিবন্ধন কার্যক্রম চালুর মধ্য দিয়ে ইউআইডি প্রদান প্রক্রিয়া শুরু হবে। ওই সময় থেকে যেসব শিশু জন্ম নেবে, তারা এই ইউআইডি পাবে। আর ২০২১-এর আগে যেসব শিশুর ইতোমধ্যে জন্ম নিবন্ধন হয়েছে, তাদের বর্তমান ১৭ ডিজিটের নিবন্ধন নম্বর ১০ ডিজিটে পরিণত হবে। এক্ষেত্রে ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা বা সিটি করপোরেশনে আবেদন করে তাদের বিদ্যমান নিবন্ধন নম্বরের পরিবর্তে নতুন নিবন্ধন সনদ নিতে হবে।
এদিকে ইতোমধ্যে যারা ভোটার হয়ে ১০ ডিজিটের জাতীয় পরিচয়পত্র পেয়েছেন, তাদের এই নম্বরই ইউআইডি হিসেবে পরিচিত হবে। অর্থাৎ এই নম্বরের কোনও পরিবর্তন আসবে না।
নির্বাচন কমিশন থেকে এখন যারা জাতীয় পরিচয়পত্র করছেন, তাদের সবাইকে ১০ ডিজিটের ইউনিক আইডি নম্বর দেওয়া হচ্ছে। আগের ১৩ বা ১৭ ডিজিটের সব আইডি ইতোমধ্যে ১০ ডিজিটে রূপান্তরিত হয়েছে। এক্ষেত্রে স্মার্টকার্ড হোক বা লেমিনেটেড হোক, উভয়কেই এখন ১০ ডিজিটের কার্ড দেওয়া হচ্ছে।
নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, কেবল জন্মনিবন্ধন বা ভোটার আইডি নয়, সবক্ষেত্রেই নাগরিকদের একটি আইডি থাকবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি, পাসপোর্টসহ সবক্ষেত্রেই এই অভিন্ন নম্বর দিয়ে ব্যক্তির পরিচয় হবে।
নির্বাচন কমিশন থেকে জানানো হয়েছে, এই নিবন্ধন কার্যক্রম যৌথ ব্যবস্থাপনায় চলবে। জন্মের পরে নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ ১০ ডিজিটের নম্বর দেবে। আর এই নম্বরটি এনআইডির সার্ভার থেকে অটো জেনারেট হবে। ওই ইউনিক আইডি নম্বর বহাল রেখে কোনও শিশুর বয়স ১০ বছর পূর্ণ হলেই তাকে এনআইডি কার্ড দেওয়া হবে। ১০ বছর পূর্ণ না হলে শিশুদের ক্ষেত্রে আঙুলের ছাপসহ অন্যান্য বায়োমেট্রিক পূর্ণতা পায় না বলেই এনআইডি কার্ড পেতে তাকে অপেক্ষায় থাকতে হবে। তবে ইউনিক আইডি নম্বরের মাধ্যমে ১০ বছরের নিচের শিশুরা এনআইডির সুবিধা ভোগ করতে পারবে। ১০ বছর পূর্ণ হলে এসব শিশুর বায়োমেট্রিক সংগ্রহ করে স্মার্ট আইডি সরবরাহ করা হবে। এদিকে যাদের বয়স ১৮ বছরের নিচে এবং যারা এখনও ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত হয়নি, তাদের নির্ধারিত পদ্ধতিতে ইউআইডি দেওয়া হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জন্ম ও নিবন্ধন কর্তৃপক্ষের ডেপুটি রেজিস্ট্রার একেএম মাসুদুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এ ধরনের একটি প্রস্তাবনা এসেছে। আগামী ৩০ নভেম্বর এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। ওই বৈঠকের পর এর অগ্রগতি জানানো যাবে।’
নির্বাচন কমিশনের এনআইডি অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাইদুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সব নাগরিকের একক আইডি নম্বর দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে আমরা আগে থেকেই কাজ শুরু করছি। আশা করি, নতুন বছর থেকে এটি শুরু করতে পারবো।’
‘ওয়ান পারসন ওয়ান নম্বর’ এই পরিকল্পনা নিয়ে আমরা এগুচ্ছি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘একজন মানুষ জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত একটি পরিচয় নম্বর নিয়ে চলবে। আমরা কয়েক শতকের পরিকল্পনা নিয়ে ১০ ডিজিটের এই ইউআইডি দেবো। দুইশ’ কোটি মানুষকে কার্ড দেওয়া যাবে।’
তিনি বলেন, ‘জন্মের পরপরই নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ এই ১০ ডিজিটের নম্বর সরবরাহ করবে। এটি চাহিদা মাফিক আমাদের এনআইডি সার্ভার থেকে অটো জেনারেট হবে।’
জানা গেছে, পরিসংখ্যান, স্বাস্থ্য, স্থানীয় সরকারসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো আগে থেকেই যার যার মতো নাগরিকদের নিবন্ধন ও তথ্য সংগ্রহ করে এলেও এতে দ্বৈততা, অসামঞ্জস্য ও বৈপরীত্যসহ বেশ কিছু সমস্যা ও জটিলতা পরিলক্ষিত হয়। যে কারণে বর্তমান সরকারের বিগত মেয়াদে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের তত্ত্বাবধায়নে নাগরিকের জন্ম, মৃত্যু, মৃত্যুর কারণ, বিবাহ, তালাক, দত্তক, স্থানান্তর ও শিক্ষা সংক্রান্ত ডাটাবেজ সংগ্রহে ‘সিভিল রেজিস্ট্রেশন অ্যান্ড ভাইটাল স্ট্র্যাটিসটিকস (সিআরভিএস)’-এর উদ্যোগ নেওয়া হয়। এর অংশ হিসেবে দেশের নাগরিকদের জীবন-প্রবাহের উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলো তথ্য-উপাত্ত আকারে সংরক্ষণ এবং তার ভিত্তিতে সব ধরনের সেবা ও সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে একক আইডি প্রদানের চিন্তা-ভাবনা করা হয়। এই একক আইডি জন্মনিবন্ধন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, ভোটার আইডি, বিভিন্ন ধরনের লাইসেন্স প্রাপ্তি, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী, ঋণগ্রহণ, কর ও ভ্যাট, আইনি সেবা, বিদেশ গমন, শ্রমিক সংক্রান্ত সেবা, পুলিশ সংক্রান্ত সেবাসহ অন্যান্য সরকারি ও বেসরকারি সব ক্ষেত্রে ব্যবহারের সুযোগ পাওয়া যাবে।