হুমায়রা রিজিয়া একজন গবেষক ও অধিকারকর্মী। তালেবানের নৃশংসতা থেকে বাঁচতে অন্য অনেকের মতো তিনিও দেশ ছেড়েছেন। তালেবান সম্পর্কে তিনি বলেন, তারা নারীদের মানুষ বলে মনে করে না।
আজ বৃহস্পতিবার হিন্দুস্থান টাইমসসহ একাধিক ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, গতকাল বুধবার ভারতের নারী সাংবাদিকদের একটি সংগঠনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এক অনলাইন মিথস্ক্রিয়ায় অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন হুমায়রা।
হুমায়রাসহ একাধিক আফগান নারী এই অনলাইন মিথস্ক্রিয়ায় অংশ নেন। তালেবান ক্ষমতা দখলের পর তাঁরা আফগানিস্তান ছেড়ে অন্য দেশে আশ্রয় নেন। মিথস্ক্রিয়ায় তাঁরা জানান, গত মাসে তালেবানের হাতে আফগানিস্তানের ক্ষমতা চলে যাওয়ার ঘটনা দেশটির নারীদের কাছে দুঃস্বপ্ন ফিরে আসার মতো পরিস্থিতির জন্ম দিয়েছে।
হুমায়রা বলেন, আগে তালেবান যখন ক্ষমতা দখল করেছিল, তখন নারীদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। তাঁদের মারধর করা হয়েছিল। নারীদের সব অধিকার তারা কেড়ে নিয়েছিল। তালেবান ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর আফগান নারীরা নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে অনেক পরিশ্রম করেছেন। তালেবান আবার ক্ষমতায় ফিরে আসায় আফগান নারীরা এখন আবার সবকিছু হারিয়েছেন।
হুমায়রা আরও বলেন, ‘আগেরবারের তালেবান শাসনে আফগানিস্তান ১০০ বছর পিছিয়ে গেছে। তালেবান নারীদের মানুষ মনে করে না।’
শিনকাই করোখাইল আফগান নারী রাজনীতিক ও অধিকারকর্মী। তিনি গত ২০ আগস্ট দেশ ছাড়েন। তালেবান আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের পর দেশটিতে নারীদের অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতি ভয়াবহ।’
শিনকাই জানান, যেসব আফগান নারী অধিকারকর্মী ও রাজনীতিক দেশ ছাড়তে পারেননি, তাঁদের বাড়িতে বাড়িতে হানা দেয় তালেবান। তাঁদের ভয় দেখানোর জন্য তালেবান এ কাজ করে। তালেবান এ বার্তা দেয় যে হয় এই নারীদের দেশ ছেড়ে পালাতে হবে, নয়তো চুপ করে থাকতে হবে।
ফাতিমা ফারামার্জ একজন আফগান সাংবাদিক। মিথস্ক্রিয়ায় তিনি বলেন, নারীদের জন্তু মনে করে তালেবান। এ কারণে নারীদের সঙ্গে তালেবান তাদের ইচ্ছামাফিক আচরণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সাম্প্রতিক একটি ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে ফাতিমা বলেন, তাঁর নারী সহকর্মীরা একটি বিক্ষোভের তথ্য সংগ্রহ করছিলেন। তখন তাঁদের ধরে একটি পুলিশ স্টেশনে নিয়ে যায় তালেবান। লাঠি, বৈদ্যুতিক তারসহ হাতে যা ছিল, তা দিয়েই তাঁদের বেদম পেটায় তালেবান।
ফাতিমা আরও বলেন, তালেবান শাসনে আফগানিস্তানে নারীদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার।
গত ১৫ আগস্ট আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল তালেবানের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। এর তিন সপ্তাহের বেশি সময় পর নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ঘোষণা করে তালেবান। এই সরকারে কোনো নারী সদস্য রাখেনি তালেবান। এ নিয়ে দেশটিতে নারীরা বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। পশ্চিমা বিশ্বও এ ব্যাপারে হতাশা ব্যক্ত করেছে।
আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর তালেবান নারীর অধিকার সুরক্ষিত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু তারা প্রতিশ্রুতি পূরণ না করে তালেবানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভরত নারীদের ওপর চরম নির্যাতন চালাচ্ছে।