২৮তম বিসিএসের সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা সাড়ে ১০ বছর আগে চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু এই দীর্ঘ সময়েও গণিত বিভাগের শিক্ষকদের কোনো পদোন্নতি হয়নি। প্রভাষক পদে যোগ দিয়ে এখনো একই পদে আছেন তাঁরা। প্রায় ১৬ বছর আগে চাকরিতে যোগ দেওয়া ২৪তম বিসিএসের শিক্ষা ক্যাডারের ২ হাজার ৩৪৬ জন কর্মকর্তার মধ্যে ৩৪০ জন সহযোগী অধ্যাপক হতে পারলেও বাকিরা সহকারী অধ্যাপক পদেই রয়ে গেছেন দীর্ঘ সময়। এমনকি তাঁদের আগে যোগ দেওয়া ২২তম বিসিএসেরও অনেকে সহকারী অধ্যাপক পদেই আছেন।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) এবং শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চাকরিজীবনের দীর্ঘ সময়েও পদোন্নতি না হওয়ায় কর্মকর্তাদের মধ্যে তৈরি হয়েছে ক্ষোভ ও হতাশা। শিক্ষা ক্যাডারের একদল কর্মকর্তা পদোন্নতির এই জট খোলার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি অনুরোধ জানিয়ে কিছুদিন আগে লিখিত আবেদন করেছেন।

মাউশির মহাপরিচালক সৈয়দ গোলাম ফারুক বলেন, তাঁদের কাজ হলো কর্মকর্তাদের তালিকাটি প্রস্তুত করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো। সেটি তাঁরা পাঠিয়েছেন। বাকি কাজ এখন মন্ত্রণালয় পর্যায়ে চলমান।

সংখ্যার দিক দিয়ে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার অন্যতম বড় ক্যাডার। বর্তমানে এই ক্যাডারে মোট পদ আছে প্রায় সাড়ে ১৫ হাজার। এর মধ্যে কর্মরত আছেন ১৩ হাজারের কিছু বেশি কর্মকর্তা। এই ক্যাডারের অধিকাংশ কর্মকর্তা সরকারি কলেজে শিক্ষকতা করেন। আর কিছুসংখ্যক কর্মকর্তা মাউশি, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ড, জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমিসহ শিক্ষা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে কর্মরত।

শিক্ষা ক্যাডারের অন্তত ২০ জন কর্মকর্তা বলেন, তাঁরা মনে করছেন শিক্ষা ক্যাডারের পদোন্নতি নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভাবনা কম। অথচ পুলিশ, প্রশাসনসহ কিছু ক্যাডারে পর্যাপ্ত পদ না থাকা সত্ত্বেও নিয়মিত পদোন্নতি হচ্ছে। এ জন্য তাঁরাও চান, বিসিএসের ব্যাচ ধরে পদোন্নতি হোক।

মাউশি সূত্রমতে, প্রায় পৌনে তিন বছর আগে ২০১৮ সালের অক্টোবরে সর্বশেষ প্রভাষক থেকে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি হয়েছিল। কাছাকাছি সময়ে সহকারী অধ্যাপক থেকে সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি হয়েছিল। এরপর এই দুই পদে আর পদোন্নতি হয়নি। তবে গত বছরের জুলাই মাসে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের ৬০৯ জন সহযোগী অধ্যাপককে পদোন্নতি দিয়ে অধ্যাপক করা হয়েছিল।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেওয়ার জন্য পদোন্নতি কমিটি গত রমজান মাস থেকে কাজ করে বিষয়টি চূড়ান্ত করেছেন। সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির পর সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির কাজ শুরু হবে।

বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে সাধারণত পদোন্নতি হয় শূন্য পদে। এর ফলে দেখা যায়, একই বিসিএসের কোনো কোনো বিষয়ে পদোন্নতি হলেও সব বিষয়ে হয় না। ২৮তম বিসিএসের গণিতের কথাই ধরা যাক। এই বিসিএসের গণিতের প্রভাষক মো. আবদুল হক গোপালগঞ্জের শেখ হাসিনা সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজে চাকরি করছেন। তিনি জানালেন, তাঁরা চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন ২০১০ সালের ডিসেম্বরে। কিন্তু এত দিনেও গণিত বিষয়ে পদোন্নতি হয়নি। অথচ তাঁদের সঙ্গে যোগ দেওয়া অন্যান্য বিষয় তো বটেই; উপরন্তু ৩১তম বিসিএসেরও কোনো কোনো বিষয়ের কিছুসংখ্যক কর্মকর্তার পদোন্নতি হয়েছে।

বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সরাসরি তদারক করে মাউশি। মাউশির একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ৯ মে সহকারী অধ্যাপক থেকে সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেওয়ার জন্য বিভাগীয় পদোন্নতি কমিটির (ডিপিসি) সভা হলেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। এই স্তরে ২২তম বিসিএস থেকে ২৬তম বিসিএসকে পদোন্নতির জন্য বিবেচনায় রেখে সম্ভাব্য তালিকাও প্রস্তুত করা হয়েছিল। এতে কমবেশি ৩ হাজার ২৫০ জনকে পদোন্নতির জন্য প্রাথমিক যোগ্য হিসেবে বিবেচনায় রাখা হয়েছে। কিন্তু এই স্তরে শূন্য পদ আছে ৩৪৫টির মতো। এর বাইরে গত বছর পদোন্নতি পাওয়া ৬০৯ জন অধ্যাপক ‘ইন সিটু’ হিসেবে আছেন, যাঁরা পদোন্নতি পেলেও কাজ করছেন সহযোগী অধ্যাপক পদে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় চায় এই ‘ইন সিটু’ পদের সংখ্যা এবং শূন্য পদ মিলিয়ে যত পদ হয়, সেইসংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দিতে। কিন্তু পদোন্নতির প্রাথমিক যোগ্য হয়ে আছেন ৩ হাজার ২৫০ জনের মতো। ফলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের চাওয়া অনুযায়ী পদোন্নতি দিতে গেলে বিরাটসংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া সম্ভব নয়। এতে বৈষম্য ও হতাশা আরও বাড়বে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাউশির একজন কর্মকর্তা বলেন, সহযোগী অধ্যাপক পদে যেসব কর্মকর্তা পদোন্নতির প্রাথমিক যোগ্যতা অর্জন করেছেন, তাঁদের পদোন্নতি দিলে সরকারের কোনো আর্থিক সংশ্লেষ থাকবে না। কারণ, বেতন স্কেল অনুযায়ী তাঁরা ইতিমধ্যে বেশি বেতন পান।

অন্যদিকে ৩৩তম বিসিএস পর্যন্ত প্রায় আড়াই হাজার কর্মকর্তাকে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির জন্য প্রাথমিক যোগ্য হিসেবে বিবেচনায় রাখা হলেও সেই পদোন্নতিও আটকে আছে।

ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ ও বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির সাবেক সভাপতি আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার বলেন, শিক্ষা ক্যাডারের অবশ্যই দ্রুত পদোন্নতি হওয়া উচিত। প্রস্তাবিত ১২ হাজারের বেশি পদের দ্রুত অনুমোদন এবং বিসিএসের ব্যাচভিত্তিক পদোন্নতি দিয়ে পদোন্নতির জট দ্রুত খোলা যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *