ব্রিটিশ রাজপরিবারের জৌলুসপূর্ণ জীবনে থেকেও ভালো ছিলেন না প্রিন্স হ্যারির স্ত্রী মেগান মার্কেল। পরিবারের মধ্য থেকেও এত বিচ্ছিন্ন ও নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ছিলেন যে, এক পর্যায়ে আত্মহত্যা করার কথাও ভেবেছিলেন ডাচেস অব সাসেক্স। তার ছেলে আর্চির জন্ম হওয়ার আগে থেকেই তার গয়ের রং কতোটা কালো হবে তা নিয়ে উদ্বেগ ছিল রাজপরিবারে।

সিবিএস টেলিভিশনে অপরাহ উইনফ্রের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে এসব বিস্ম্ফোরক কথা বলেছেন মেগান। রোববার সাক্ষাৎকারটি প্রচার হলে হৈচৈ পড়ে যায়। ব্রিটিশ রাজপরিবারে এখনও বর্ণবাদ শেকড় গেড়ে থাকায় সমালোচনা শুরু হয়। খবর বিবিসি, সিএনএন ও সিবিএস নিউজের।

মেগান বলেন, ২০১৮ সালে রাজপরিবারে বিয়ে হওয়ার আগে তিনি ছিলেন সাদাসিধে জীবনের মানুষ। কিন্তু বিয়ের কিছুদিন পর অসহায়ত্বের বোধ তাকে গ্রাস করে। উইনফ্রের এক প্রশ্নের জবাবে মেগান বলেন, বাকিংহাম প্যালেসের একজন শিকারে পরিণত হয়েছিলেন তিনি। তার ছেলে আর্চির গায়ের রং কত কালো হতে পারে, সে অনুমান করা থেকে শুরু করে তিনি বন্ধুদের সঙ্গে কতবার মধ্যাহ্নভোজে গেছেন সবকিছুতে নাক গলাত প্যালেস।

যখন আর্চি গর্ভে ছিল, তখন তাকে জানানো হয়, তার সন্তানকে প্রিন্স উপাধিতে ভূষিত করা হবে না। এটি ছিল প্রচলিত নিয়মের ব্যতিক্রম। এটি তাকে মর্মাহত করেছিল। রাজ পরিবারের কে বা কারা গায়ের রং নিয়ে ওই উদ্বেগের কথা বলেছিল, তা প্রকাশ করতে চাননি মেগান। উইনফ্রের সঙ্গে আলোচনায় রাজপরিবারে কাটানো জীবনের নানা জটিলতার কথা বলতে গিয়ে বারবার কান্না আটকাতে চেষ্টা করেন মেগান। তিনি বলেন, ‘জীবন অবিশ্বাস্য রকমের কঠিন হয়ে উঠেছিল। কিন্তু স্বামীর সঙ্গে অনুভূতিগুলো ভাগ করে নিতে পারছিলেন না। মেগান বলেন, ওই সময় কথাগুলো প্রকাশ করতে আমি সত্যি লজ্জা পাচ্ছিলাম। বিশেষ করে হ্যারিকে বলতে লজ্জা পাচ্ছিলাম। কেননা, আমি জানতাম, সে নিজেই এই পরিবারে কতটা ভুক্তভোগী।’

হ্যারি সাক্ষাৎকারে বলেন, মেগান মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লেও রাজপরিবার থেকে কোনো সাহায্য পায়নি। এ নিয়ে কথাও হতো না। মেগানের সঙ্গে সম্পর্কই তাকে বাঁচিয়েছে। রাজপরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নিজের ব্যক্তিগত সম্পর্কের বিষয়ে হ্যারি বলেন, তার বাবা প্রিন্স চার্লসের আচরণ তাকে ‘হতাশ’ করেছে। চার্লস এক সময় তার ফোন ধরাও বন্ধ করে দেন। তবে তার দাদি রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথকে তিনি অনেক ভালোবাসেন।

তারা জানান যে, আসছে গ্রীষ্ফ্মে তারা আবার বাবা-মা হতে যাচ্ছেন এবং এই সন্তানটি একটি মেয়ে। ২০২০ সালের মার্চে রাজপরিবার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগের পর এই দম্পতি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় গিয়ে বসবাস শুরু করেন। গত মাসেই তারা ঘোষণা দেন যে রাজপরিবারের দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্য হিসেবে তারা আর ফিরবেন না। ক্যালিফোর্নিয়ায় কৃষ্ণাঙ্গ মা আর শ্বেতাঙ্গ বাবার ঘরে জন্ম নেওয়া মেগান সাক্ষাৎকারে বলেন, ২০১৮ সালে রাজপরিবারে বিয়ে হওয়ার আগে তিনি ছিলেন সাদাসিধে জীবনের মানুষ।

মেগানের এই সাক্ষাৎকার সিকি শতাব্দী আগে বিবিসিকে দেওয়া প্রিন্সেস ডায়ানার বিস্ম্ফোরক সাক্ষাৎকারের কথাই স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। চার্লসের সঙ্গে বিচ্ছেদের তিন বছর পর ১৯৯৫ সালে ডায়ানা ওই সাক্ষাৎকার দেন যা দেখেন দেশটির রেকর্ডসংখ্যক দর্শক।

হ্যারি-মেগান দম্পতির সাক্ষাৎকার প্রকাশের পর যুক্তরাজ্যে রাজপরিবারের তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে। বিরোধী দল লেবার পার্টির একজন নেতা রাজপরিবারে বর্ণবাদের অভিযোগের তদন্ত দাবি করেছেন। তবে যুক্তরাজ্যের শিশুবিষয়ক মন্ত্রী ভিকি ফোর্ড দাবি করেছেন, ব্রিটিশ সমাজে বর্ণবাদের কোনো স্থান নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *