প্রাথমিকের গণ্ডি পেরোননি কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার গজারিয়া গ্রামের চাষি আবু জামান (৪৫)। কয়েক বছর আগ থেকে একটি মুঠোফোন ব্যবহার করছেন তিনি। তবে ‘স্মার্ট ফোন’ নয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের নাম শুনেছেন। কিন্তু নিজের কোনো অ্যাকাউন্ট নেই। অথচ ফেসবুকে এক ব্যক্তির নামে কুৎসা রটানোয় প্ররোচনার অভিযোগ এনে তাঁর বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা ঠুকে দিয়েছেন তাঁরই এক প্রতিবেশী। মামলার আসামি হয়ে আবু জামান এখন পাঁচ মাসের বেশি সময় ধরে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তাঁর সঙ্গে এলাকা ছেড়েছেন পরিবারের সদস্যরাও।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছরের ১৯ অক্টোবর মামলটি করেছেন গজারিয়া গ্রামেরই মিজানুর রহমান শিকদার (৪৩) নামের এক ব্যক্তি। বাদী ও বিবাদীর গ্রামের বাড়ি একেবারে পাশাপাশি। তবে তিনি বর্তমানে থাকেন একই জেলার কটিয়াদি উপজেলায়। মামলায় আবু জামান ছাড়াও একই গ্রামেরই আল আমিন (২৫) নামের আরেক ব্যক্তিকে আসামি করা হয়।
এজাহারে বলা হয়, বাদীর বাবা সমাজে প্রতিষ্ঠিত একজন ব্যক্তি। জীবদ্দশায় বাবার বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেনি। বাবা মারা যান গত বছরের ৪ অক্টোবর। এরপর থেকে আবু জামান ও আল আমিন তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করেছেন। গেল বছরের ৯ অক্টোবর তাঁর বাবার নাম উল্লেখ করে অশালীন ও আপত্তিকর কথাবার্তা লিখে ‘Md. Amamin’ নামে একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে পোস্ট করা হয়। পোস্টে যা লেখা হয়েছে সবই ছিল আবু জামানের প্ররোচনায়।
এদিকে মামলাটি হওয়ার পর আবু জামান ও আল আমিন এলাকা ছেড়ে গা ঢাকা দিয়ে আছেন। মুঠোফোন বন্ধ থাকায় আল আমিনের সঙ্গে কথা বলা যায়নি। মুঠোফোনে আবু জামান বলেন, ‘নাম জানি, কিন্তু ফেসবুকে কী হয়, তা তো জানি না। আবার এইডার লগে মামলার সম্পর্ক আছে কি না, তাতো আরও আগে জানি না। ডিজিটাল আইন সম্পর্কেও কোনো ধারণা নাই। অথচ অহন আমারে এই আইনে খাইছে।’
আবু জামানের পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বাদী মিজানুর রহমান শিকদারের সঙ্গে তাঁদের পরিবারের বিরোধ ২০ বছরের বেশি সময় ধরে চলে আসছে। বিরোধ মূলত জমিজমা নিয়ে। এই নিয়ে মামলাও কম হয়নি। ২০০২ সালে একই ইস্যুতে মিজানুর রহমানের বাবা তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। চুরি-ডাকাতির অভিযোগ এনেও মামলা করেছেন। আর এখন করলেন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা। মূলত পরিবারটিকে এলাকাছাড়া করার উদ্দেশ্যেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দেওয়া হয়েছে বলে আবু জামানের পক্ষের লোকজনের ধারণা।