পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষা কোন পদ্ধতিতে হবে, তা নিয়ে অস্পষ্টতা কাটেনি। উপাচার্যদের সংগঠন বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিলেও কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় সশরীর পরীক্ষা নেওয়ার ঘোষণা দিচ্ছে। আবার দেশের বিদ্যমান বাস্তবতায় সারা দেশে কয়েক লাখ শিক্ষার্থীকে একসঙ্গে নিয়ে অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার মতো সক্ষমতা আছে কি না, তা নিয়ে কোনো কোনো উপাচার্যের মধ্যেও প্রশ্ন রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, দেশের বর্তমান বাস্তবতায় অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া ঠিক হবে না। বরং করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে আলাদা পরীক্ষার পরিবর্তে বিভিন্ন এলাকায় অধিক কেন্দ্র (বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হতে পারে) করে সমন্বিতভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা উচিত। কারণ, অনলাইনে নানাবিধ অসুবিধার আশঙ্কা রয়েছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক মুহাম্মদ আলমগীরের মতে, পরীক্ষার বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে উপাচার্যদের পক্ষ থেকে চিঠি পেয়েছেন তাঁরা। এখন শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ইউজিসি ও উপাচার্যদের সঙ্গে আলোচনা করে কোন পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা হবে, সেটি ঠিক করা হবে।
করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে এ বছরের উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা হবে না। জেএসসি ও এসএসসির গড় ফলের ভিত্তিতে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ফল নির্ধারণ করা হবে। ফলে সাড়ে ১৩ লাখের বেশি পরীক্ষার্থীর সবাই পাস করে যাবেন। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে মূল্যায়নের ফল প্রকাশ করার কথা।
এ অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কীভাবে হবে, সেটি নিয়ে আলোচনা চলছে। বর্তমানে দেশে ৪৬টি সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় থাকলেও ৩৯টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সরাসরি শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। ভর্তি নিয়ে ১৭ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের সভায় করোনা সংক্রমণের কারণে এবার অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার জন্য আলোচনা হয়। এ জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য মুনাজ আহমেদের নেতৃত্বে তৈরি করা সফটওয়্যার ব্যবহারের বিষয়েও আলোচনা হয়।
কিন্তু ওই সভার পর বিষয়টি আর বেশি দূর এগোয়নি। অনলাইনেই ভর্তি পরীক্ষা হবে, নাকি সরাসরি হবে, সেটিও চূড়ান্ত করা যায়নি। এর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণা দিয়েছে, তারা অনলাইনে নয়, সরাসরি পরীক্ষা নেবে। এ অবস্থায় অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে একধরনের দ্বিধা দেখা দিয়েছে। অবশ্য এর আগে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতেই সিদ্ধান্ত হয়েছিল চারটি স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়) ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তাদের মতো করে ভর্তি পরীক্ষা নেবে। বাকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে তিনটি গুচ্ছ করে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হবে।
ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে জানতে চাইলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মীজানুর রহমান বলেন বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের সভার পর নতুন কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ওই সভায় বলা হয়েছিল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি উপাচার্য সফটওয়্যার তৈরি করেছেন সেটির ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা হবে, তারপর সবদিক দিয়ে এর সুরক্ষা দেখে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া যায় কি না সেটি বিবেচনা করা হবে। কিন্তু এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ লাগবে, আবার অনেকের স্মার্ট ফোন নেই। ইন্টারনেট সংযোগও লাগবে।
ইউজিসি এবং একাধিক উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শিগগির শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ইউজিসি এবং উপাচার্যরা বসে কোনো পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা হবে সেটি চূড়ান্ত করা হবে। তবে ভর্তি পরীক্ষাটি হবে বহুনির্বাচনী প্রশ্নের (এমসিকিউ) ভিত্তিতে।
সরাসরি শিক্ষার্থী ভর্তি করা ৩৯টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে মোট আসন আছে ৬০ হাজারের কিছু বেশি। এবার পরীক্ষা ছাড়াই এইচএসসির মূল্যায়ন হওয়ায় ১৩ লাখ ৬৫ হাজারের বেশি পরীক্ষার্থীর সবাই পাস করবেন। যাদের অধিকাংশের লক্ষ্যই থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া। এর সঙ্গে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ থাকায় গত বছর পাস করা শিক্ষার্থীদের অনেকেই ভর্তি পরীক্ষা দেবে। ফলে ভর্তিতে বিরাট চাপ পড়বে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মো. কায়কোবাদ বলেন, অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া ঠিক হবে না। এতে যত রকমের অসততা আছে, সেটার চেষ্টা হবে। বরং সারা দেশে বেশিসংখ্যক কেন্দ্র স্থাপন করে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে মেডিকেল ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মতো সমন্বিতভাবে সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করা উচিত।