হাঙ্গেরির চিকিৎসক ইস্টভান কোরমেনডি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসি বাহিনীর হত্যাযজ্ঞ থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন তিনি। এরপর থেকেই চিকিৎসাসেবায় আত্মনিয়োগ করেন তিনি। বর্তমানে তাঁর বয়স ৯৭ বছর। এই বয়সেও রোগীদের সেবা করে যাচ্ছেন তিনি।
বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে বলা হয়েছে, ১৯২৩ সালে হাঙ্গেরির রাজধানীতে জন্মগ্রহণ করেন ইস্টভান কোরমেনডি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৫০ সাল থেকেই চিকিৎসক হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি। ১৯৮৯ সালে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে পেশা থেকে অবসর নেন। এরপর রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন ইস্টভান। সেই থেকেই রোগী দেখে যাচ্ছেন এই চিকিৎসক।
ইস্টভান কোরমেনডি বলেন, ‘আমার বাবা চিকিৎসক ছিলেন। ১৯২০ সালে তিনি এই পেশায় এসেছিলেন। আমি এখানেই জন্ম নিয়েছি এবং বেড়ে উঠেছি। আগে এ দেশের জনগণের জন্য এত বেশিসংখ্যক ক্লিনিক ছিল না, যা এখন আছে। সব চিকিৎসকই নিজেদের অ্যাপার্টমেন্টে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন এখন।’
ইস্টভান কোরমেনডির বাবা চিকিৎসক হিসেবে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। সেই সময়কার একটি ছবিও এখনো তাঁর বাড়িতে শোভা পায়। সেটি দেখিয়ে বার্তা সংস্থা এএফপিকে তিনি বলেন, বাবার কারণেই চিকিৎসা পেশা গ্রহণে তিনি উৎসাহী হয়েছিলেন। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইহুদি হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার সুযোগ পাচ্ছিলেন না তিনি। পরে নিজের পরিচয় লুকিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যান। একই সঙ্গে নাৎসি বাহিনীর কবল থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখাটাও ছিল এক কঠিন কাজ।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে যে চিকিৎসাসেবায় আত্মনিয়োগ করেছিলেন ইস্টভান, তা এখনো চলছে। করোনা মহামারিও তাঁকে থামাতে পারেনি। বর্তমানে তাঁর রোগীর তালিকায় আছে স্থানীয় ৩০০ জন।
তবে ইস্টভান স্বীকার করেন, করোনা মহামারির কারণে তাঁর কাজ বেশ কঠিন হয়ে গেছে। এখন বেশির ভাগ রোগীকেই তিনি সেবা দিচ্ছেন ফোন বা ই-মেইলে। অবশ্য এর মধ্যেই করোনার টিকাও নিয়েছেন ইস্টভান। তিনি মনে করেন, স্বাস্থ্য পরামর্শ দেওয়ার ক্ষেত্রে রোগী ও চিকিৎসকদের মুখোমুখি দেখা হওয়া প্রয়োজন। তবে মহামারির কারণে টেলিমেডিসিন কার্যক্রম আরও কিছুদিন চালাতে হবে বলেই মনে করছেন এই চিকিৎসক। এতে চিকিৎসার মান কমতে পারে বলেও মনে করেন তিনি।
বয়স ১০০ বছরের কাছাকাছি হলেও চিকিৎসক হিসেবে অবসর নেওয়ার কোনো ভাবনা নেই ইস্টভানের। তিনি বলেন, ‘এটি আমার আবেগের জায়গা। আমি যত দিন শারীরিকভাবে সুস্থ আছি, তত দিন আমার রোগীদের সুস্থ করে যেতে চাই।’