করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকার ৫ এপ্রিল থেকে ৭ দিনের জন্য কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। তাই এ সময়ের মধ্যে (৫-১১ এপ্রিল পর্যন্ত) মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। গত রোববার (৪ এপ্রিল) মাউশি এক নির্দেশনায় এ কথা জানিয়েছে। আদেশ বাস্তবায়নে উপপরিচালক, জেলা শিক্ষা অফিসার ও উপজেলা/থানা শিক্ষা অফিসার এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদের এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
করোনার কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। অনলাইন ক্লাসে চলছে পড়াশোনা। এরই মধ্যে গত বছরের অ্যাসাইনমেন্টে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হয়েছে। গত বছরের মতো এ বছরও ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট ও নির্ধারিত কাজের মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হচ্ছে। গত ২০ মার্চ থেকে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ মূল্যায়ন কার্যক্রম শুরু হয়। তৃতীয় সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্ট প্রকাশ করেছিল মাউশি। প্রতি সপ্তাহ শুরুর আগেই শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট ও নির্ধারিত কাজ প্রকাশ করা হচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রতিটি শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচি পুনর্বিন্যাস করে শিক্ষার্থীদের শিখনপ্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে অ্যাসাইনমেন্ট ও মূল্যায়নব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে শিক্ষা অধিদপ্তর। সপ্তাহ শুরুর দুদিন আগে শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট ও নির্ধারিত কাজ প্রকাশ করা হয় মাউশির ওয়েবসাইটে। সপ্তাহ শেষে শিক্ষার্থীরা তাদের সেই অ্যাসাইনমেন্ট বা নির্ধারিত কাজ শেষ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জমা দিয়ে (সরাসরি/অনলাইনে) নতুন অ্যাসাইনমেন্ট গ্রহণ করবে। অনলাইনে বা সামাজিক দূরত্ব মেনে শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া এবং গ্রহণ করতে বলা হয়েছে স্কুলগুলোকে। এর মধ্যে করোনা সংক্রমণ রোধে সরকারি বিধিনিষেধের কারণে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট কার্যক্রম স্থগিত হয়ে গেল।
অ্যাসাইনমেন্ট (কাজ) মূল্যায়নের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের অর্জিত শিখনফল সবলতা বা দুর্বলতা চিহ্নিত করে পরবর্তী সময়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অ্যাসাইনমেন্ট বা নির্ধারিত সময়ে কাজের মাধ্যমে তাদের অর্জিত শিখনফল মূল্যায়ন করা হবে। পুনর্বিন্যাস করা পাঠ্যসূচির ভিত্তিতে কোন সপ্তাহে শিক্ষার্থীর কী মূল্যায়ন করা হবে, সে বিবেচনায় অ্যাসাইনমেন্ট বা নির্ধারিত কাজ প্রণয়ন করা হয়েছে।
শিক্ষকেরা যেভাবে মূল্যায়ন করছেন
অ্যাসাইনমেন্ট ও নির্ধারিত কাজ ছাড়া কোনো ধরনের পরীক্ষা বা বাড়ির কাজ শিক্ষার্থীদের দেওয়া যাবে না। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে সব মূল্যায়ন রেকর্ড যথাযথভাবে সংরক্ষণ করতে হবে। অ্যাসাইনমেন্ট বা নির্ধারিত কাজের আওতায় ব্যাখ্যামূলক প্রশ্ন, নির্দেশনা অনুসরণ করে নিবন্ধ, রচনা, অনুচ্ছেদ লিখন, সাহিত্য পর্যালোচনা, কেস স্টাডি, প্রজেক্ট, পরীক্ষণ, সারসংক্ষেপ, সারাংশ লিখন, মডেল, চার্ট, পোস্টার তৈরি, ছবি আঁকা, প্রতিবেদন প্রণয়ন প্রভৃতি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট বা নির্ধারিত কাজ সাদা কাগজে স্বহস্তে লিখে জমা দেওয়া নিশ্চিত করতে হবে শিক্ষকদের। অভিভাবক বা তাঁর প্রতিনিধি স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে প্রতি সপ্তাহে এক দিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে অ্যাসাইনমেন্ট সংগ্রহ করবেন এবং জমা দেবেন। শিক্ষার্থীদের লেখায় তাঁর মৌলিক চিন্তা, কল্পনা, সৃজনশীলতা প্রতিফলিত হয়েছে কি না, শিক্ষকেরা তা বিশেষভাবে লক্ষ করবেন। প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে প্রতিটি বিষয়ের প্রতিটির অ্যাসাইনমেন্ট বা নির্ধারিত কাজ মূল্যায়ন করে তার সবল/দুর্বল দিকগুলো খাতায় চিহ্নিত করতে হবে। এমনভাবে মন্তব্য লিপিবদ্ধ করতে হবে, যেন শিক্ষার্থীরা তাঁদের সবল ও দুর্বলতার দিকগুলো বুঝতে পারেন। শিক্ষার্থীদের ‘অতি উত্তম’, ‘উত্তম’, ‘ভালো’, ‘অগ্রগতি প্রয়োজন’ ইত্যাদির মাধ্যমে অ্যাসাইনমেন্টগুলোর শাব্দিক মূল্যায়ন করতে বলা হয়েছে শিক্ষকদের।