সমুদ্রে ভাসমান নৌকা থেকে উদ্ধারের পর মাদারীপুরের তরুণ আল আমিনের আশ্রয় হয়েছে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির আশ্রয়কেন্দ্রে। এই আশ্রয়কেন্দ্র লিবিয়ার সীমান্তবর্তী তিউনিসিয়ার শহর জার্জিসে অবস্থিত। সেখানে আল আমিন আছেন ২৫ দিন ধরে। শুধু তিনি নয়, আশ্রয়কেন্দ্রটিতে রয়েছেন আরও বাংলাদেশি।
তিউনিসিয়ার কোস্টগার্ড গত ১৮ মে ভূমধ্যসাগরে ভাসমান একটি কাঠের নৌকা থেকে ৩৫ বাংলাদেশিকে উদ্ধার করে, যাঁদের মধ্যে একজন এই আলামিন। তিনি লিবিয়া হয়ে ইতালি যাওয়ার বিপজ্জনক যাত্রায় নিজের চাচাকে সমুদ্রে তলিয়ে যেতে দেখেছেন। নিজেও কোনোরকমে মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচেছেন। তবু তিনি দেশে ফিরতে চান না।
আল আমিন বলেন, ‘ইতালি যাওয়ার টাকা জোগাড় করতে অনেক ঋণ করেছি। অথচ যেতে পারলাম না। যদি যেতে না পারি, ধারের টাকা শোধ করব কী করে!
তিউনিসিয়ার জার্জিসের আশ্রয়শিবিরে অবস্থানরত আল আমিনসহ আটজন বাংলাদেশি তরুণের সঙ্গে মুঠোফোনে এ প্রতিবেদকের কথা হয় গত সোমবার রাতে। এতে সহায়তা করেন তিউনিসিয়ার রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির কর্মকর্তারা। ছয়জনই বলেছেন, বিপুল ঋণের বোঝা নিয়ে তাঁরা দেশে ফিরতে চান না।
লিবিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাস জানিয়েছে, গত ১৮ মে থেকে ১০ জুন পর্যন্ত লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার সময় ভূমধ্যসাগর থেকে তিউনিসিয়ার কোস্টগার্ড ৪৪৩ জন বাংলাদেশিকে উদ্ধার করে। তাঁদের লিবিয়া সীমান্তবর্তী তিউনিসিয়ার জার্জিস, জারবা, মেদনিন ও স্ফেক্স শহরের চারটি আশ্রয়শিবিরে রাখা হয়েছে। তিউনিসিয়া রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি ওই আশ্রয়শিবিরগুলো পরিচালনা করছে। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) দুই মাসের জন্য উদ্ধারকৃতদের খাবারসহ মানবিক সহায়তা দেবে।
উদ্ধার হওয়া বাংলাদেশিদের দেশে ফেরানোর বিষয়ে জানতে চাইলে লিবিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স গাজী মো. আসাদুজ্জামান কবির গতকাল মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা ৪৫ জন স্বেচ্ছায় দেশে ফিরতে রাজি হয়েছেন। তাঁদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য আইওএমকে দেওয়া হয়েছে। তারা ওই ৪৫ জনকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করবে।
এদিকে লিবিয়া হয়ে ইতালি যাওয়ার বিপজ্জনক যাত্রায় বাংলাদেশিদের সংখ্যা বেড়েছে। জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) ও আইওএমের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মে পর্যন্ত ভূমধ্যসাগর ও স্থলসীমান্ত পাড়ি দিয়ে বিভিন্ন দেশের ১৬ হাজার ৮১৯ জন নাগরিক ইতালি পৌঁছেছেন। তাঁদের মধ্যে বাংলাদেশিদের সংখ্যাই বেশি। এ সময়ে এই পথে ২ হাজার ৬০৮ জন বাংলাদেশি ইতালি পৌঁছান।
বাংলাদেশি ছাড়া আফগানিস্তান ও আফ্রিকা মহাদেশের কয়েকটি দেশের নাগরিকেরা এই বিপজ্জনক যাত্রায় শামিল হচ্ছেন। ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি যাওয়া মানুষদের ৬০ শতাংশই যাচ্ছেন লিবিয়া হয়ে।
পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, পরিণতি জানার পরও যাঁরা যাচ্ছেন তাঁরা নিজের, পরিবারের ও দেশের ক্ষতি করছেন। এ সমস্যার মূলোৎপাটন করতে হলে শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পদক্ষেপই যথেষ্ট নয়, সামাজিকভাবে দায়িত্ব নিতে হবে। যাঁরা গেছেন, দেশে ফিরে আসার পর তাঁদের কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়ার জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে।