বাংলাদেশ থেকে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন। এই শিক্ষাবর্ষে আট হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রে লেখাপড়া করেছেন। এতে যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষার্থী পাঠানোর তালিকায় গত বছরের তুলনায় তিন ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ। এর ফলে উচ্চশিক্ষার জন্য দেশটিতে শিক্ষার্থী পড়তে যাওয়া দেশগুলোর মধ্যে বিশ্বে ১৪তম অবস্থানে উন্নীত হলো বাংলাদেশ। এই তালিকার শীর্ষে রয়েছে চীন।

এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানিয়ে মার্কিন দূতাবাস বলেছে, ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে ৮ হাজার ৫৯৮ জন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী লেখাপড়া করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে বেছে নিয়েছেন। আন্তর্জাতিক শিক্ষা বিনিময়ের ওপর সদ্য প্রকাশিত ‘২০২১ ওপেন ডোরস রিপোর্টস অন ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশনাল এক্সচেঞ্জ’ প্রতিবেদনে এসব তথ্য প্রকাশিত হয়েছে।

১৫ থেকে ১৯ নভেম্বর আন্তর্জাতিক শিক্ষা সপ্তাহ উদ্‌যাপন উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক ব্যুরো এবং আন্তর্জাতিক শিক্ষা ইনস্টিটিউট যৌথভাবে আন্তর্জাতিক শিক্ষা বিনিময় কার্যক্রমের ওপর ২০২১ সালের ‘ওপেন ডোরস রিপোর্ট’ প্রকাশ করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রে দ্রুত ও বেশি হারে শিক্ষার্থী পড়তে যাওয়া দেশগুলোর মধ্যে কয়েক ধাপ এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষার্থী পড়তে যাওয়া দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থান ১৪তম। গত বছর বাংলাদেশ ছিল ১৭তম, আর এর আগের বছর ছিল ২০তম।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষার্থী পাঠানোর তালিকায় বাংলাদেশ তিন ধাপ এগিয়ে ১৭তম থেকে ১৪তম অবস্থানে এসেছে। করোনা মহামারি চলাকালে বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের সংখ্যা হ্রাস পাওয়ার প্রেক্ষাপটে ২০২০ সালের তুলনায় বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের সংখ্যা মাত্র ২ দশমিক ৭ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে শিক্ষাগত বিনিময় বৃদ্ধি একটি কৌশলগত অগ্রাধিকার। কারণ, আন্তর্জাতিক শিক্ষা বিনিময়ের মাধ্যমে উভয় জাতি, জনগণ ও পেশাদার নেটওয়ার্কগুলো উপকৃত হয়।

বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক শিক্ষা সপ্তাহ–২০২১ উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত যুক্তরাষ্ট্রের নারীদের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানবিষয়ক এক ভার্চ্যুয়াল সেমিনারে যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স হেলেন লাফেভ বলেছেন, ‘কোভিড-১৯ যখন বিশ্বব্যাপী চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে, সেই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে দেখা হৃদয়গ্রাহী ও অনুপ্রেরণামূলক।’ তিনি আশা প্রকাশ করেন, এই অনুষ্ঠানটি বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের যুক্তরাষ্ট্রে লেখাপড়া করার পথ খুঁজে পেতে সহায়তা করবে। তিনি দর্শক, শ্রোতা ও অংশগ্রহণকারীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ সম্পর্কে আরও বিস্তারিত তথ্যের জন্য বাংলাদেশের ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনায় অবস্থিত চারটি আমেরিকান স্পেসে থাকা এডুকেশন ইউএসএ উপদেষ্টার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানান।

যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস এডুকেশন ইউএসএ বাংলাদেশ-এর মাধ্যমে বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ও স্কলারদের জন্য বেশ কয়েকটি ভার্চ্যুয়াল প্রোগ্রামের আয়োজনের মধ্য দিয়ে এ বছরের আন্তর্জাতিক শিক্ষা সপ্তাহ–২০২১ উদ্‌যাপন করছে। বাংলাদেশে অবস্থিত এডুকেশন ইউএসএর পরামর্শকেন্দ্রগুলো কয়েকটি বিষয়ের ওপর ওয়েবিনার আয়োজন করবে; যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে—নারীদের কলেজের ওপর অধিবেশন, লিবারেল আর্টস শিক্ষা, যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশি শিক্ষার্থী পরিষদগুলোর সঙ্গে কথোপকথন এবং যুক্তরাষ্ট্রে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর উভয় শিক্ষার সঙ্গে সম্পৃক্ত অন্যান্য বিষয়। বক্তাদের মধ্যে থাকবেন যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের কর্মকর্তা, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ও ভর্তি কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তারা। যাঁরা তাঁদের আলোচনায় কীভাবে ভর্তির আবেদন লিখতে হবে, স্কলারশিপ বা বৃত্তি এবং আর্থিক সহায়তা পাওয়ার জন্য কী করণীয়, জানানোর পাশাপাশি সম্ভাব্য বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে লেখাপড়া করা–সংক্রান্ত মনোভাব ও দৃষ্টিভঙ্গি বিনিময় করবেন।

এডুকেশন ইউএসএ ৪৩০টির বেশি পরামর্শকেন্দ্রের একটি বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক, যার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র সরকার যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষাসংক্রান্ত তথ্য সঠিকভাবে প্রদান করে থাকে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষাসংক্রান্ত তথ্য প্রদানের সরকারি তথ্যের উৎস হিসেবে কাজ করে। বাংলাদেশে এডুকেশন ইউএসএ যুক্তরাষ্ট্রে অধ্যয়নের সুযোগসংক্রান্ত তথ্য বিনা মূল্যে পেতে সহায়তা করে থাকে।

ওপেন ডোরস হলো যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত বা শিক্ষাদান করছেন এমন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ও স্কলার এবং নিজ দেশের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ক্রেডিটের জন্য বিদেশে অধ্যয়নরত আমেরিকান শিক্ষার্থী–সম্পর্কিত বিস্তৃত তথ্যভান্ডার। এ ছাড়া ওপেন ডোরস যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকা আন্তর্জাতিক স্কলার এবং প্রি-একাডেমিক ইনটেনসিভ ইংলিশ প্রোগ্রামে ভর্তি হওয়া আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের সংখ্যাও প্রকাশ করে থাকে। বার্ষিক প্রতিবেদনটি সোমবার ১৫ নভেম্বর ওপেন ডোরসের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *