নতুন বছরে যুক্তরাষ্ট্র পাচ্ছে নতুন প্রেসিডেন্ট। কিন্তু জো বাইডেন এমন সময়ে দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন, যখন করোনাভাইরাসের আঘাতে যুক্তরাষ্ট্র লন্ডভন্ড। সেই সঙ্গে আছে দেশের ভেতরে-বাইরে হাজারো প্রতিবন্ধকতা। অর্থনীতি থেকে শুরু করে রাজনীতি—সবই সমস্যায় জর্জরিত। আবার সাধারণ মার্কিনরাও দ্বিধাবিভক্ত। এত বাধা পেরিয়ে বাইডেন কি পারবেন হোয়াইট হাউসকে উজ্জ্বল করে তুলতে?
ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৬ সালের নির্বাচনে হিলারি ক্লিনটনকে হারিয়ে প্রবল প্রতাপে হোয়াইট হাউসে অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন। এরপর থেকে গত চারটি বছর নিজের খেয়ালখুশিমতোই চলেছেন তিনি। মার্কিন প্রেসিডেন্টের মুখে একেক সময় একেক বক্তব্য শোনা গেছে। কখনো উত্তর কোরিয়াকে হুমকি দিয়েছেন, আবার কখনো কিম জং উনের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে হাসিমুখে ছবি তুলেছেন। ছিল প্রচণ্ড বিভক্তিসূচক মন্তব্য। তাতে বর্ণবৈষম্য, শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদ, নারীর প্রতি অবমাননা, ঘৃণা—কী ছিল না! আর ২০২০ সালে তো করোনাভাইরাস মহামারিকেও তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়েছিলেন ট্রাম্প। দিয়েছিলেন জীবাণুনাশক দিয়ে ফুসফুস পরিষ্কারের মতো হাস্যকর তত্ত্বও। নির্বাচনের পর শেষ বেলাতেও বিভক্তির সুর তুলেছেন হার স্বীকার না করে, তুলেছেন ভোট জালিয়াতির অভিযোগ। এমন এক বিক্ষিপ্ত ও তুমুল বেসুরো পরিস্থিতিতেই জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিতে যাচ্ছেন।
ট্রাম্প বিদায় নিলেও তাই অস্বস্তি কমবে না। নতুন প্রেসিডেন্টের শপথ নেওয়ার পর জো বাইডেন নিজের দেশের ভেতরেই সবচেয়ে বেশি বাধার মুখোমুখি হবেন। নির্বাচনে ৮ কোটি ১০ লাখ পপুলার ভোট পেয়েছেন বাইডেন। ট্রাম্পকে তিনি এ ক্ষেত্রে হারিয়েছেন প্রায় ৭০ লাখ ভোটে। প্রায় ৫১ দশমিক ৩ শতাংশ ভোট পেয়েছেন ডেমোক্র্যাটদলীয় এই প্রার্থী। কিন্তু মনে রাখতে হবে, ট্রাম্পের ঝুলিও শূন্য নয়, পেয়েছেন ৪৬ দশমিক ৮ শতাংশ বা প্রায় ৭ কোটি ৪০ লাখ ভোট। অর্থাৎ ট্রাম্পের প্রচণ্ড বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য বা আদর্শে আস্থা রাখা ভোটারের সংখ্যা কম নয়। অ্যারিজোনা, জর্জিয়া, উইসকনসিন ও নেব্রাস্কা—এই চারটিতে জেতা বাইডেনের সঙ্গে ট্রাম্পের পার্থক্য ছিল সব মিলিয়ে মাত্র ৬৫ হাজার ৯টি ভোট। এই কটি ভোটে পিছিয়ে না পড়লে কিন্তু ট্রাম্পই দ্বিতীয়বারের মতো হোয়াইট হাউসে থেকে যেতেন। বিষয়টি অবশ্য বাইডেনের ৩০৬ ও ট্রাম্পের ২৩২টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোটের বিপুল ব্যবধানে বোঝা যায় না।
অর্থাৎ একটি প্রবল বিভক্ত দেশ নিয়েই বিশ্বে ছড়ি ঘোরানোর স্থান পুনরুদ্ধার করতে হবে বাইডেনকে। চীন, রাশিয়ার কল্যাণে সেখানে পাত্তা পাওয়াও সহজ নয়। খামখেয়ালি ট্রাম্পের কারণে বেশ কিছুদিন ধরেই আর বিশ্বমোড়লের জায়গায় নেই যুক্তরাষ্ট্র। উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া এই ভাঙাচোরা পররাষ্ট্রনীতিকে রাতারাতি আগের রূপে ফিরিয়ে নেওয়া বাইডেনের জন্য কঠিন হবে। সেই সঙ্গে আছে ইরান, উত্তর কোরিয়া, ন্যাটো, প্যারিস চুক্তি প্রভৃতি ইস্যুতে ট্রাম্পের কারণে তৈরি হওয়া অচলাবস্থা। এসব ক্ষেত্রে চাইলেও আগ্রাসী হয়ে সমস্যার সমাধান করতে পারবেন না বাইডেন। ফলে সুফল আনতে হবে আলোচনার টেবিলেই। আবার একনায়কতান্ত্রিক ও জনতুষ্টিমূলক শাসনের প্রতি ট্রাম্পের বিপুল আগ্রহ বিশ্বজুড়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের ফেরিওয়ালার ভূমিকাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। ভাবমূর্তির এসব ক্ষত নিরাময় করে দেশকে স্বরূপে নিয়ে আসা তাই বাইডেনের জন্য হবে পাহাড়সম কাজ।
তথ্যসূত্র: এনবিসি নিউজ, এনপিআর ডট অরগ, দ্য নিউইয়র্ক টাইমস, সিএনএন, ওয়াশিংটন পোস্ট, দ্য কনভারসেশন ও দ্য গার্ডিয়ান