‘লাইলাতুল বারাআত’ শাবান মাসের বিশেষ একটি রাত। ‘লাইলাতান নিসফে মিন শাবান’ তথা মধ্য শাবানের রাত হলো এ শবে বরাত। রাতটিতে ইবাদত-বন্দেগি করা বা উদযাপন নিয়ে রয়েছে বিতর্ক, অতিরঞ্জন ও ছাড়াছাড়ি। এসব কারণে মর্যাদা হারাতে বসেছে ‘লাইলাতান নিসফে মিন শাবান’। এ বিতর্ক, অতিরঞ্জন ও ছাড়াছাড়ির শেষ কোথায়? দেখুন একটি ভালো কাজকে এতটা বির্তকের মধ্যে ফেলে মূলত কি অর্জন করতে চাই? আমরা যারা সাধারণ মানুষ রয়েছি তাদের এই প্রশ্নটি মনে বহুদিন থেকে।
হযরত আয়শা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সা.) এ রাতে মদিনার কবরস্থান ‘জান্নাতুল বাকি’তে এসে মৃতদের জন্য দোয়া ও ইস্তিগফার করতেন। তিনি আরও বলেন, নবীজি (সা.) তাঁকে বলেছেন, এ রাতে বনি কালবের ভেড়া–বকরির পশমের (সংখ্যার পরিমাণের) চেয়েও বেশিসংখ্যক গুনাহগারকে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। (তিরমিজি)
নবী করিম (সা.) বলেছেন, ১৪ শাবান দিবাগত রাত যখন আসে, তখন তোমরা এ রাত ইবাদত–বন্দেগিতে কাটাও এবং দিনের বেলায় রোজা রাখো। কেননা, এদিন সূর্যাস্তের পর আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার আসমানে নেমে আসেন এবং আহ্বান করেন, ‘কোনো ক্ষমাপ্রার্থী আছো কি? আমি ক্ষমা করব; কোনো রিজিক প্রার্থী আছ কি? আমি রিজিক দেব; আছ কি কোনো বিপদগ্রস্ত? আমি উদ্ধার করব।’ এভাবে ভোর পর্যন্ত আল্লাহ মানুষের বিভিন্ন প্রয়োজনের কথা উল্লেখ করে আহ্বান করতে থাকেন।
হজরত আয়শা সিদ্দিকা (রা.) বলেন, একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) নামাজে দাঁড়ালেন এবং এত দীর্ঘ সিজদা করলেন যে আমার ধারণা হলো তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন। আমি তখন উঠে তাঁর পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিলাম, তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলি নড়ল; তিনি সিজদা থেকে উঠলেন এবং নামাজ শেষ করে আমাকে লক্ষ করে বললেন, “হে আয়শা! তোমার কি এ আশঙ্কা হয়েছে?” আমি উত্তরে বললাম, ‘ইয়া রাসুলুল্লাহ (সা.), আপনার দীর্ঘ সিজদা থেকে আমার আশঙ্কা হয়েছিল আপনি মৃত্যুবরণ করেছেন কি না।’
নবীজি (সা.) বললেন, ‘তুমি কি জানো এটা কোন রাত?’
আমি বললাম, আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুলই ভালো জানেন।’ তখন নবীজি (সা.) বললেন, ‘এটা হলো অর্ধ শাবানের রাত। এ রাতে আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের প্রতি মনোযোগ দেন, ক্ষমাপ্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করে দেন, অনুগ্রহপ্রার্থীদের অনুগ্রহ করেন। আর বিদ্বেষ পোষণকারীদের তাদের অবস্থাতেই ছেড়ে দেন।’ (শুআবুল ইমান)
রাসুল (সা.) রমজান মাসের পর রজব-শাবান মাসে বেশি নফল নামাজ ও নফল রোজা পালন করতেন। আল্লাহ আমাদের সকলের জীবনের সকল গুনাহ ক্ষমা করে দিন। আগামী দিনে সঠিক পথে চলবার সুযোগ দিন। সকল বিপদ মুক্ত করে দিন-আমীন।।