চট্টগ্রাম নগরের আটটি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ মাঝপথে ফেলে চলে গেছেন তিন ঠিকাদার। এর মধ্যে যুতটুকু কাজ করেছেন, তার ৮৯ কোটি ৫৭ লাখ টাকাও তুলে নিয়ে গেছেন তাঁরা। কাজ শেষ করতে দফায় দফায় নোটিশ দিয়ে, সময় বাড়িয়েও তাঁদের সাড়া মেলেনি। শেষ পর্যন্ত গত ফেব্রুয়ারি ও মার্চে ঠিকাদারদের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করেছে সিটি করপোরেশন।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) ‘সিটি গভর্ন্যান্স প্রজেক্ট (সিজিপি)’–এর কাজ নিয়ে এমন জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। জাপানের সাহায্য সংস্থা জাইকার অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন এসব প্রকল্পের তত্ত্বাবধানে রয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন।
প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে ১৭টি সড়কের উন্নয়ন ও সংস্কার, একটি খালের পাশে প্রতিরোধ দেয়াল, ফুটপাত নির্মাণ। একক ও যৌথভাবে বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এই কাজগুলো নেয়। আট প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয় ২৩২ কোটি ৬২ লাখ টাকা। সিটি করপোরেশন বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামে উন্নয়নকাজের কার্যাদেশ দিলেও মূলত কাজ করছিলেন তিনজন ঠিকাদার। এর মধ্যে দুজনই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা।
যাতায়াতের দুর্ভোগ ও জলাবদ্ধতা নিরসনে উন্নয়ন প্রকল্পগুলো নেওয়া হয়েছিল। এভাবে মাঝপথে উন্নয়নকাজ বন্ধ করে দেওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন চট্টগ্রাম নগরের বাসিন্দারা। আর ঠিকাদারদের এমন আচরণে বিপাকে পড়েছে সিটি করপোরেশন। বাকি কাজ শেষ করতে এখন নতুন করে ঠিকাদার নিয়োগ দিতে হচ্ছে সংস্থাটিকে। চলতি মাসে এ প্রক্রিয়া শেষ হবে।
সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, এই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে কালো তালিকাভুক্ত করা হচ্ছে। এরা ভবিষ্যতে সিটি করপোরেশনের কোনো কাজ করতে পারবে না। এদের জরিমানাও করা হবে।
চট্টগ্রাম নগরের বৃষ্টির পানিনিষ্কাশনে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মহেশ খাল। এই খালের দুই পাশে প্রতিরোধ দেয়াল ও সড়ক নির্মাণে ৪১ কোটি টাকার কাজ পায় মঈনুদ্দিন বাঁশী নামের এক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু কাজটি করছিল কুমিল্লার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘ছালেহ আহাম্মদ’। এই প্রতিষ্ঠানের মালিক কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার পীরযাত্রাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেন।
এ প্রকল্পের কাজের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি হয়েছিল ২০১৭ সালের ৩ ডিসেম্বর। ২০১৯ সালের ৩ জুন কাজ শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু দুই দফা সময় দেওয়ার পরেও কাজ শেষ করেননি ঠিকাদার। ইতিমধ্যে ঠিকাদারকে ১৮ কোটি ৭২ লাখ টাকা পরিশোধ করেছে সিটি করপোরেশন।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ছালেহ আহাম্মদ আরও দুটি উপপ্রকল্পের কাজ পেয়েছিল। এগুলো চট্টগ্রাম নগরের গুরুত্বপূর্ণ পোর্ট কানেকটিং (পিসি) সড়কের উন্নয়ন ও সংস্কার। ব্যয় ধরা হয় ১০৭ কোটি টাকা। কিন্তু ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে নির্মাণকাজের কার্যাদেশ পেলেও শেষ পর্যন্ত তিন কিলোমিটারের কাজ শেষ হয়নি। এই দুটি কাজের বিপরীতে এই ঠিকাদারকে দেওয়া হয়েছে ৬০ কোটি টাকা।
এদিকে পিসি রোডের আরেকটি অংশের কাজ পায় যৌথভাবে ইয়াকুব, ম্যাক ও এস অনন্ত ত্রিপুরা নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো। তবে এই কাজটি করছিলেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও পরিবহন মালিক সমিতির নেতা মঞ্জুরুল আলম চৌধুরী। ২৭ শতাংশ কাজের জন্য তাঁকে ৮ কোটি ৪৪ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়। তবে তিনি দাবি করেছেন, অন্য ঠিকাদারদের সময় বাড়িয়ে দেওয়া হলেও তাঁকে দেওয়া হয়নি।
- এ ছাড়া ভিন্ন ভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামে চুক্তি হলেও চারটি প্রকল্পের কাজ তদারকি করতেন শাকিল আহমেদ নামের এক ঠিকাদার। এই চারটি কাজের অগ্রগতি ছিল যথাক্রমে ১৪ শতাংশ, ৪ শতাংশ, ৩১ শতাংশ ও ২১ শতাংশ। এই কাজগুলোর বিপরীতে ২ কোটি ৪১ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়েছিল। শাকিল আহমেদের দাবি, অসুস্থ থাকায় ঠিক সময়ে কাজ শেষ করতে পারেননি।