শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটির ঘোষণা আবারও এল। গতকাল শনিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ৩০ জুন পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। আর আগেই বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় খুলবে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়ার পর।

দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আবার বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে বন্ধের মেয়াদ বাড়ানোর ঘোষণা প্রত্যাশিতই ছিল। কিন্তু যে প্রশ্নের উত্তর নেই তা হলো, করোনা মহামারি শিগগিরই নিয়ন্ত্রণে না এলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা কী। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, জনসংখ্যার বড় অংশকে গণটিকাদানের আওতায় না আনতে পারা পর্যন্ত করোনা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসবে না। সেটার জন্য এক থেকে দুই বছর বা তার বেশি সময়ও লাগতে পারে। প্রশ্ন হলো, তত দিন কি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে, সরাসরি পাঠদান ও পরীক্ষার বিকল্প ব্যবস্থা কী হবে।

করোনা মহামারির শুরুর দিকে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে মন্ত্রণালয় নিয়মিত বিরতিতে বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের মেয়াদ বাড়ানোর খবর জানাচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে যাঁরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার অপেক্ষায়, তাঁরা আশাহত হচ্ছেন। জাতিসংঘের সংস্থা ইউনিসেফ সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে জানায়, বিশ্বে বেশি দিন স্কুল বন্ধ থাকা ১৪টি দেশের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ।

শিক্ষাবিদেরা ধাপে ধাপে খোলার পরামর্শ দিলেও মন্ত্রণালয় চায় একসঙ্গে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে। কিন্তু সেটিও বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। আবার শিক্ষার্থীদের টিকা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজেও খুব একটা গতি নেই। শিক্ষক ও শিক্ষাবিদেরা বলছেন, এটা ঠিক যে পরিস্থিতির উন্নতি না হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা ঝুঁকিপূর্ণ। তবে করোনা দীর্ঘস্থায়ী হলে বিকল্প ব্যবস্থা ও সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা কী, তা জানিয়ে দেওয়া উচিত।

মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ফাহিমা খাতুন বলেন, ‘ছুটি বৃদ্ধির অপরিকল্পিত পদক্ষেপ দেখতে দেখতে ক্লান্ত ও হতাশ হয়ে গিয়েছি। সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার ভিত্তিতে এখান থেকে বের হওয়ার পথ বের করতে হবে।’

দেশে প্রাক্‌-প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় চার কোটি। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকার প্রভাব বহুমাত্রিক। ইতিমধ্যে শিক্ষার্থীদের জীবন থেকে একটি শিক্ষাবর্ষের প্রায় পুরোটাই হারিয়ে গেছে। আরও একটি শিক্ষাবর্ষের অর্ধেকের মতো চলে গেছে। এতে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। বিভিন্ন গবেষণায় এসেছে, শিক্ষার্থীদের একটি অংশ আর পড়াশোনায় ফিরবে না। তাদের কেউ কেউ শিশুশ্রমে নিয়োজিত হয়েছে। কেউ কেউ বাল্যবিবাহের শিকার হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা শেষ না হওয়ায় কর্মজীবনে প্রবেশ করতে পারছেন না।

করোনার মধ্যে শহরের শিক্ষার্থীরা অনলাইনে পড়াশোনা করছে। গ্রামের শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছে। সরকার সংসদ টিভি ও রেডিওতে রেকর্ড করা ক্লাস প্রচার করছে। তবে তাতে কাজ যে তেমন একটা হচ্ছে না, তা–ও জরিপে এসেছে। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) ও ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) গত ১১ মে এক যৌথ গবেষণায় জানায়, প্রাথমিকের ১৯ শতাংশ ও মাধ্যমিকের ২৫ শতাংশ শিক্ষার্থী শিখতে না পারা বা শিক্ষণ ঘাটতির ঝুঁকিতে আছে।

শুধু পড়াশোনার ক্ষতি নয়, ঘরবন্দী শিক্ষার্থীদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অসংখ্য অভিভাবকের অভিযোগ, তাঁদের সন্তানেরা মুঠোফোনে আসক্ত হয়ে পড়ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *