গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলা ও নৃশংস হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় করা মামলাটি দ্বিতীয় ধাপে এখন হাইকোর্টে শুনানির অপেক্ষায় আছে। আসামিদের মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন ও আপিলের ওপর শুনানির পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মামলার পেপারবুক তৈরি করা হয়েছে। বেঞ্চ নির্ধারণ হলেই শুনানি শুরু হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
নৃশংস হত্যাযজ্ঞের ওই ঘটনায় করা মামলায় ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর বিচারিক আদালত রায় দেন। রায়ে নব্য জেএমবির সাত সদস্যকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। আইনি প্রক্রিয়ার পরবর্তী ধাপে হাইকোর্টে মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন (ডেথ রেফারেন্স) ও আসামিদের আপিল শুনানি এবং তা নিষ্পত্তির পালা। অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন মনে করছেন, করোনা পরিস্থিতি না থাকলে এত দিনে হয়তো শুনানি শুরু হয়ে যেত।
ডেথ রেফারেন্সের শুনানির পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পেপারবুক (মামলার বৃত্তান্ত) তৈরি করা হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্র ও একাধিক আইনজীবী জানান, সাধারণত বছর ও মামলার ক্রম অনুসারে ডেথ রেফারেন্সের শুনানি হয়ে থাকে। তবে গুরুত্ব বিবেচনায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতেও ডেথ রেফারেন্স শুনানি হয়ে থাকে।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে গত ৫ এপ্রিল থেকে বিধিনিষেধ আরোপ করে সরকার। এ অবস্থায় প্রধান বিচারপতি হাইকোর্টের চারটি ভার্চ্যুয়াল বেঞ্চ গঠন করে দেন। পর্যায়ক্রমে বেঞ্চসংখ্যা বাড়ে। তবে তখন ডেথ রেফারেন্স মামলা শুনানির বেঞ্চ ছিল না। গত ১৭ জুন প্রধান বিচারপতি হাইকোর্টের ৫৩টি ভার্চ্যুয়াল বেঞ্চ গঠন করে দেন। ২০ জুন থেকে এসব বেঞ্চে বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। ডেথ রেফারেন্স মামলা শুনানির জন্য গতকাল বুধবার পর্যন্ত হাইকোর্টে তিনটি বেঞ্চ ছিল। আজ থেকে দেশে এক সপ্তাহের কঠোর বিধিনিষেধ শুরু হচ্ছে। এ সময় হাইকোর্টের বিচারিক কার্যক্রম সীমিত পরিসরে চলবে।
আদালত–সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্যমতে, চলতি বছরের ২০ জুন পর্যন্ত ৮৫০টি ডেথ রেফারেন্স মামলা বিচারাধীন। এখন ২০১৬ সালে আসা ডেথ রেফারেন্সের শুনানি শুরু হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র মোহাম্মদ সাইফুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, হোলি আর্টিজান মামলার পেপারবুক পর্যালোচনা চলছে। আনুষঙ্গিক প্রক্রিয়া শেষে বিধি অনুসারে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে গুলশানে হোলি আর্টিজান বেকারিতে নৃশংস হামলা চালায় জঙ্গিরা। তারা অস্ত্রের মুখে দেশি-বিদেশি অতিথিদের জিম্মি করে। হত্যা করে ২০ জন দেশি-বিদেশি নাগরিককে। সেই রাতে অভিযান চালাতে গিয়ে পুলিশের দুই কর্মকর্তা নিহত হন।
হামলার দুই বছরের মাথায় ২০১৮ সালের ২৩ জুলাই আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। ওই বছরের ২৬ নভেম্বর আট আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় মামলার বিচার। এক বছরের মাথায় বিচারিক আদালত রায় দেন।