গত এক বছরে অনলাইন হয়ে উঠেছে আমাদের ‘লাইফলাইন’। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় প্রতি ১০ জনে ৮ জন মানুষ বলছেন, মহামারির সময় প্রযুক্তি তাঁর জীবনযাত্রা সহজ করেছে। কোনো পরিবার হয়তো কোভিড-১৯–এর সর্বশেষ তথ্য খুঁজেছে অনলাইনে, ডিজিটাল টুল কাজে লাগিয়ে নতুন নতুন গ্রাহকের কাছে পৌঁছে গেছেন অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, আবার শিক্ষার্থীরাও ক্যাম্পাসে না গিয়েই পড়ালেখা চালিয়ে গেছে।

এই সময়ে মানুষের কাজে আসাই গুগলের লক্ষ্য। গুগল বিশ্বের সব তথ্য সাজিয়ে রাখতে চায়, সারা বিশ্বের মানুষের কাছে তথ্য পৌঁছে দিতে চায়। আমরা আনন্দিত যে এই অনিশ্চিত সময়ে গুগলের সার্চ, ইউটিউব, ম্যাপ-এর মতো সেবা মানুষের কাজে লেগেছে। গুগল মিট, গুগল ক্লাসরুমের মতো মাধ্যমগুলো মানুষকে পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত রেখেছে।

দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার ডিজিটাল রূপান্তর

ডিজিটাল টুল ব্যবহারের প্রচলনের দিক দিয়ে আমাদের কয়েক বছর এগিয়ে দিয়েছে কোভিড-১৯। ফলে দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার ইন্টারনেটভিত্তিক অর্থনীতি একটা ব্যাপক রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। টেমাসেক এবং বেইন অ্যান্ড কোম্পানির সঙ্গে সম্প্রতি আমরা একটা গবেষণা করেছি, যাতে দেখা যায়, এই অঞ্চলের চার কোটির বেশি মানুষ প্রথমবারের মতো ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ২০২০ সালে। সংখ্যাটা আগের বছরের তুলনায় ৪ গুণ বেশি। সেই সঙ্গে, প্রতি তিনজনে একজন কোনো না কোনো নতুন ডিজিটাল সেবা নিয়েছেন। যেমন অনলাইনের মাধ্যমে শিক্ষা বা কেনাকাটা। এঁদের মধ্যে ৯০ শতাংশই মহামারির পরও এই সেবা ব্যবহার করতে চান।

শুধু শহরে নয়; ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও ফিলিপাইনে যাঁরা করোনাকালে প্রথম ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ত হলেন, তাঁদের অর্ধেকের বেশি শহরের বাইরে থাকেন। অর্থাৎ শহর আর গ্রামের ডিজিটাল বিভেদ দূর হতে আর বেশি দেরি নেই।

একদিকে কোভিড যেমন ডিজিটাল টুল ব্যবহার বহুগুণে বাড়িয়েছে, তেমনি কত মানুষ এখনো প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারছে না, সেটাও আমাদের সামনে তুলে ধরেছে। ১৭০ কোটি মানুষ এখনো ব্যাংকিং সেবা থেকে দূরে আছে। আফ্রিকার বহু পরিবার এখনো ব্রডব্যান্ড ব্যবহার করতে পারে না। লাখো নারী উদ্যোক্তা পুরুষদের মতো একই রকম প্রযুক্তি সহায়তা পায় না।

প্রশ্ন হলো, কীভাবে আমরা আরও সংগতিপূর্ণ ডিজিটাল অর্থনীতি গড়ে তুলতে পারি। যে অর্থনীতি ইন্টারনেটের সুবিধা সমানভাবে সবার কাছে পৌঁছে দেবে? প্রথমত, ডিজিটাল বিভেদ কমানোর কাজটি আরও বেগবান করতে হবে। অর্থাৎ ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ততা, অর্থনৈতিক অন্তর্নিবেশ ও ডিজিটাল দক্ষতা আরও বাড়াতে হবে। দ্বিতীয়ত, সরকার ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ করতে হবে একসঙ্গে, যেমনটা আমরা কোভিডের সময় দেখেছি।

ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ততাই মূল

সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করা কিংবা সুযোগ সবার কাছে পৌঁছে দেওয়া—এ কথাগুলো আমি ব্যক্তিগতভাবে অনুভব করতে পারি। যেহেতু ভারতে বড় হয়েছি, কম্পিউটার বা ফোন আমি খুব একটা হাতের কাছে পাইনি। একটা কল করার জন্য আমাকে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে; কারণ, একটাই ফোন অনেকে ব্যবহার করত। অতএব যখন আমাদের পরিবারে প্রথম একটা ফোন এল, সেটা আমাদের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছিল। আর তা থেকেই আমি প্রযুক্তি ব্যবহার করে মানুষের জীবন বদলে দেওয়ার ধারণা পেয়েছি।

ডিজিটাল অর্থনীতি গড়ে তোলার মূল কথা একটাই—সবাইকে ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ত করা। পরের ধাপ হলো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে প্রত্যেককে ডিজিটাল দক্ষতা ও টুলের সঙ্গে পরিচিত করা। সরকার বা প্রতিষ্ঠানের একার পক্ষে এই কাজ সম্ভব নয়। সে জন্যই আমি এক হয়ে কাজ করার কথা বলছি। আমাদের সামনে খুব ভালো উদাহরণ আছে। ২০২০ সালে আমরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সরকার, এনজিওগুলোকে একই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করতে দেখেছি। ডিজিটাল অর্থনীতি গড়ে তুলতে হলেও একই রকম প্রত্যয় নিয়ে কাজ করতে হবে।

কোভিড–পরবর্তী পৃথিবীর জন্য আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত—প্রযুক্তির সুবিধা যেন যতটা সম্ভব ছড়িয়ে দেওয়া যায়, এবং সবাই যেন সমানভাবে সেই সুবিধা ভোগ করতে পারে। যদি আমরা সফল হই, তাহলে ২০২০ সালটিকে ইতিহাস মনে রাখবে এক নতুন শুরু হিসেবে। (সংক্ষেপিত)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *