তথ্য বা নথি ফাঁসের তদন্তের ক্ষেত্রে সাংবাদিকের ই–মেইল ও ফোনের রেকর্ড আর জব্দ করবে না যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির বিচার বিভাগ গত শনিবার এ ঘোষণা দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএন এক প্রতিবেদনে জানায়, এমন সময় এই ঘোষণা এল, যখন তথ্য ফাঁসের তদন্তে সাংবাদিকের তথ্যদাতাদের চিহ্নিত করতে তাঁদের ই–মেইল ও ফোন রেকর্ড জব্দ করার ঘটনা বাড়ছে। সে ক্ষেত্রে মার্কিন বিচার বিভাগের ওই ঘোষণা নীতিগত বড় পরিবর্তন বলেই মনে করা হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের জনসংযোগ পরিচালক অ্যান্থনি কোলে শনিবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, প্রেসিডেন্টের নির্দেশনা অনুসারে দীর্ঘদিনের চর্চায় পরিবর্তন এনে বিচার বিভাগ তথ্য ফাঁসের তদন্তে সাংবাদিকের তথ্যদাতার তথ্য জানতে তাঁকে আইনি বাধ্যবাধকতায় ফেলার চর্চা আর অনুসরণ করবে না।
বিচার বিভাগের এই ঘোষণার এক দিন আগেই মার্কিন সংবাদপত্র নিউইয়র্ক টাইমস এক প্রতিবেদনে জানায়, সংবাদপত্রটির শীর্ষ এক আইনজীবী বের করেছেন যে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময় বিচার বিভাগ নিউইয়র্ক টাইমসের চার সাংবাদিকের ই–মেইল তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করেছে। জো বাইডেন ক্ষমতায় আসার পরও এই চেষ্টা অব্যাহত ছিল। এ ছাড়া সম্প্রতি আরও জানা যায়, বিচার বিভাগ গোপনে সিএনএন, ওয়াশিংটন পোস্টসহ অন্যান্য মার্কিন সংবাদমাধ্যমের সাংবাদিকদের তথ্য জোগাড় করার চেষ্টা করেছে।

নিউইয়র্ক টাইমস জানায়, সংবাদপত্রটির আইনজীবী ডেভিড ম্যাকক্রাও বলেছেন, চলতি বছরের গোড়ার দিকে বাইডেন প্রশাসন নিউইয়র্ক টাইমসের কয়েকজন শীর্ষ নির্বাহীর কাছে সংবাদপত্রটির সাংবাদিকদের ই–মেইল তথ্য জানতে চায়। কিন্তু প্রশাসনের নিষেধের মুখে ওই নির্বাহীরা বিষয়টি বার্তাকক্ষ এবং পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদককে জানাতে পারেননি। এই আইনজীবী গত শুক্রবার আরও জানান, নিউইয়র্ক টাইমসের ই–মেইল ব্যবস্থা ব্যবস্থাপনা করে গুগল। প্রতিষ্ঠানটির কাছ থেকে নিউইয়র্ক টাইমসের চার সাংবাদিক ম্যাট আপুজ্জো, অ্যাডাম গোল্ডম্যান, এরিক লিচব্লু এবং মাইকেল স্কিমিটের ই–মেইল তথ্য জোগাড় করার চেষ্টা করেছিল বিচার বিভাগ।

এরপর শনিবার এক বিবৃতিতে হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি জেন সাকি বলেন, শুক্রবার রাতের আগে হোয়াইট হাউসের কেউই ওই বিষয়ে অবগত ছিলেন না। এর কারণ, ফৌজদারি অপরাধের মামলার তদন্তে বিচার বিভাগ পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করে। তিনি আরও বলেন, ফৌজদারি অপরাধের তদন্তে হোয়াইট হাউস হস্তক্ষেপ করে না।

তবে তথ্য ফাঁসের তদন্তে সাংবাদিকের ই–মেইল ও ফোন রেকর্ড জব্দ করার বিষয়টি বিচার বিভাগের বিষয়ে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। বিচার বিভাগও পুনর্নিশ্চিত করেছে, তারা আগের ওই নীতি আর অনুসরণ করবে না।
অবশ্য বিচার বিভাগ সাংবাদিকের তথ্য জোগাড়ের ওই চর্চা আপাতত বন্ধ করার ঘোষণা দিলেও এই বিভাগের আনুষ্ঠানিক নির্দেশিকায় কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি বলে জানায় সিএনএন। এর মানে হলো, বাইডেন প্রশাসনের যেকোনো উত্তরসূরির সময় চর্চাটি আবার শুরু হতে পারে।

এর আগে গত মাসে সিএনএন এক প্রতিবেদনে জানায়, ট্রাম্প প্রশাসন গোপনে সংবাদমাধ্যমটির সংবাদিক বারবারা স্টারের ২০১৭ সালের ই–মেইল ও ফোন রেকর্ড জোগাড় করেছে। ওয়াশিংটন পোস্টও এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, তাদের তিন সাংবাদিকের ২০১৭ সালের ফোন রেকর্ড জোগাড় করেছিল ট্রাম্প প্রশাসনের বিচার বিভাগ। এ ছাড়া এই বিভাগ ওই সাংবাদিকদের ই–মেইল তথ্যও জোগাড় করার চেষ্টা করেছিল। ওই তিন সাংবাদিক মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার (এফবিআই) তদন্তের বিষয়টি নিয়ে সংবাদ সংগ্রহ করছিলেন সে সময়।

এসব ব্যাপারে গত মাসে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সিএনএনকে বলেছিলেন, তিনি বিচার বিভাগকে সাংবাদিকের ই–মেইল ও ফোনের রেকর্ড জব্দ করতে দেবেন না।

শনিবারের বিবৃতিতে বিচার বিভাগের জনসংযোগ পরিচালক অ্যান্থনি কোলে আরও বলেন, মার্কিন বিচার বিভাগ দৃঢ়ভাবে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতাকে মূল্যায়ন করে, যা যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে সংরক্ষিত। সাংবাদিকদের স্বাধীনতা নিশ্চিতে এই বিভাগ সব ধরনের যথাযথ পদক্ষেপ নিতে বদ্ধপরিকর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *