আমাদের রাষ্ট্রপতি এড. আবদুল হামিদ গতকাল এক বক্তব্যে বলেছেন-সনদ নির্ভরতা কমিয়ে জ্ঞান নির্ভর প্রজন্ম তৈরী করতে হবে। শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল মানুষ হিসাবে তৈরীর সকল চেষ্টা প্রব্যাহত রাখতে হবে। কথা গুলোর গভীরতা কতটুকুন তা বুঝবার জন্য বিশেষ জ্ঞানের প্রয়োজন। বহুকাল থেকে আমি যুদ্ধ করে আসছি তথাকথিত পরীক্ষা বিশেষত. প্রাথমিক সমাপনি ও জেএসসি বাদ দেয়ার। ছোট সময়ে এই জাতীয় পাবলিক পরীক্ষা, নম্বর ভিত্তিতে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে আমি। স্কুল পর্যায়ে  ভর্তি পরীক্ষার মত বিষয় ইতিমধ্যে বাদ দেয়া হয়েছে, এটি যৌক্তিক। এবার আসুন-রাষ্ঠ্রপতি বললেন, সৃজনশীল মানুষ হওয়ার কথা-উপায় কি-
আমরা সবাই সৃজনশীল মানুষ হতে চাই। সৃজনশীল হওয়ার জন্য প্রথমে আমাদেরকে কিছু অভ্যাস পরিবর্তন করতে হবে। যারা এই বৈশিষ্ট্য গুলো মেনে চলতে পারে তারাই সৃজনশীল হয়।
৥৥ অন্যদের চেয়ে আলাদা হওয়া-
প্রতিটি সফল মানুষ প্রতিদিন যা করার চেষ্টা করে, তার উৎস হচ্ছে চিন্তা। চিন্তাটা কেমন? নিশ্চয়ই ব্যতিক্রম। যেকোন অর্জন, সফলতা শুরু হয় ভিন্ন চিন্তা ভাবনা এবং পরিকল্পনা থেকে। অন্যদের থেকে ভিন্ন হওয়ার সহজ পথ হচ্ছে অন্যরা যা করতে অস্বীকার করে, তেমন কাজ করা। তাই তেমন একটি কাজ হাতে নিন। হতে পারে সেটি বই পড়া কিংবা স্কিল ডেভেলপ করা। এটি যা-ই হোক সেটি করুন। আপনি তৎক্ষণিক ভাবে ওই ভিড় থেকে আলাদা হয়ে উঠেবন। ৬ মাস পর আপনি আনকমন হয়ে উঠবেন। মনে রাখবেন ১০জন ভিড় থেকে আলাদা হয়ে উঠা চাট্রি খানা কথা নয়। সবার সে সাহস বা দৃঢ়তা থাকে না। কিন্তু সব সৃজনশীল, মহৎ মানুষদের এই সাহস বা দৃঢ়তা থাকে। এই জন্য তারা একসময় স্পেশাল হয়ে উঠে সবার চোখে। স্পেশাল হতে হলে স্পেশাল কাজ করতেই হবে।
৥৥ শুরুটা হল কঠিন-
সকালের ঘুম থেকে উঠার প্রক্রিয়াটাই বলে দিবে আজকের দিন কেমন হবে। আপনার রয়েছে কত পরিকল্পনা, কত লক্ষ, কত আইডিয়া। কিন্তু কে এসবকে কেয়ার করে? যে পর্যন্ত আপনি বাস্তবে কিছু করছেন, ততক্ষণ এগুলো কিছুই না। প্রতিদিনই ইতস্তত ভাব, অনিশ্চয়তার ভয় আমাদের আইডিয়া, পরিকল্পনাকে কাজে রুপান্তর করতে বাধা সৃষ্টি করে। তাই অল্প করে যাত্রা শুরু করুন। যেকোনো কাজের শুরুটা হচ্ছে সবচেয়ে কঠিন । পরবর্তী ধাপগুলো সহজ। তাই শুরু করুন যেভাবে হউক। নিজের চারপাশের ভয় এবং জড়তা কাটানোর জন্যে এর চেয়ে ভালো আইডিয়া আর কিছু এ নাই। মনে রাখতে হবে আপনি পারবেন এই মানসিকতা যেন নিজের মধ্যে থাকে।
৥৥  মূল্যায়ান করুন-
আমাদের আশেপাশে অনেক মানুষ রয়েছে যাদের ভিতর অসাধারণ কিছু প্রতিভা রয়েছে।কিন্তু তারা সঠিক মূল্যায়ন পাচ্ছেনা। এরকম মানুষ দেখলে কখনো প্রশংসা করতে ভুলবেন না। তাদের কে বুঝিয়ে বলুন তাদের ভিতর কত সম্ভাবনা লুকিয়ে আছে। বিশ্বাস করুন আপনার একটু অনুপ্রেরণা তার জীবন বদলে দিবে। মানুষের জীবনে সবচেয়ে বড় আকাঙ্ক্ষা হচ্ছে প্রশংসা শোনার আকাঙ্ক্ষা। প্রতিটি মানুষ চায় তার কাজের স্বীকৃতি পেতে। তার কাজে যদি কোন ভুল থাকে ব্যাক্তিগতভাবে তার ভুল ধরিয়ে দিন। এতে সে অপমান অনুভব করবেনা। ধরুন, আপনার পরিচিতজন একটি পোশাক পরেছে-দেখে আজ আপনার আগের মত ভাল লাগেনি। আপনি তাকে এমন ভাবে বলবে না, তোমার পোশাকটা একদম ভাল হয়নি, বরং বলুন গতকালের পোশাকের  মত ভালো হয়নি। এটি দৃষ্ঠিভঙ্গি।
৥৥ সাফল্যের  সূত্রটা মনে রাখুন-
সফলতার মহাসূত্র কথা শোনা। আমরা একদম শুনতে পছন্দ করি না, বলতে ভালোবাসি। কথা যত বলবেন তার চেয়ে ১০ গুন বেশি শুনবেন। মনে রাখবেন প্রকৃত আত্নবিশ্বাসী লোক কথা বলার তেমন প্রয়োজন বোধ করে না। মূর্খ লোক সবসময় অপ্রয়োজনীয় কথা বলে নিজেদের কে স্মার্ট প্রমান করতে চায়। আপনি না বলে স্মার্ট হতে চাইবেন।
৥৥ কে কি বলবে-
আমাদের সমাজটাই এমন আপনি জিতে গেলে আত্নীয় হয়ে উঠবে সবাই। আর যতদিন পেছনে ছিলেন কেউ পরিচয়ও দিতে চাইত না। এমন সমাজের কে কি বলল, কে কি করল? এমন চিন্তায় পড়ে থাকলে কখনও আপনি আগাতে পারবেন না। অন্যরা আপনাকে নিয়ে কি ভাববে, কি বলবে এ ভাবনা নিজের মধ্যে গুটিয়ে রাখবেন না। মর্যাদাপূর্ণ জীবন যাপন করতে চাইলে এরকম হীনমন্যতা, ক্ষতিকর চিন্তা পরিহার করতে হবে। অন্যদের প্রশংসা, স্বীকৃতি যত মুখোপেক্ষি থাকবেন, তত তাদের গোলাম হয়ে থাকতে হবে। অন্যের মন্তব্য, পছন্দ, অপছন্দকে আপনি এত গুরুত্ব দিচ্ছেন?
৥৥ পারফেক্ট হওয়ার প্রত্যশা—
আমাদের সবার প্রত্যশা হচ্ছে পারফেক্ট হওয়া। কিন্তু পৃথিবীর কোন কিছু পারফেক্ট নয় বরং পারফেকশন চাওয়া টি হচ্ছে আমাদের বড় শত্রু। কঠোর পরিশ্রম করুন, বড় বড় কাজ করুন, আপনার সর্বোচ্চ ক্ষমতা দিয়ে চেষ্টা করুন। নিজের যে কোন ঘাটতি, অক্ষমতা কাটিয়ে উঠতে সবসময় চেষ্টা করুন। নিজের অজান্তেই আপনিই পারফেক্ট।
৥৥ ভুল গুলোর পর্যালোচনা করুন-
ঘুমানোর আগে ডায়েরি নিয়ে বসুন, সারাদিন কাজ গুলো নোট খাতায় লিখুন, এবার ভাবুন কি কি ভালো হয়েছে। ভালো কাজের জন্য সৃষ্টিকর্তা কে ধন্যবাদ দিন। খারাপ কাজের জন্য নিজেকে সরি বলুন। পরবর্তীতে একই ভুল যেনো না হয় সেইজন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হোন। মনে রাখুন যেই সমাজ আপনাকে একদিন বলত ওহ এই কাজটির জন্য যোগ্য নয়-ঠিক একই সমাজ আরেকদিন এসে বলবে আসলে তুমিই সেরা। সমাজ, সমাজের মানুষ গুলো এমনই। হতাশ হলে চলবে।
৥৥ বই পড়ুন-
বই পড়তে হবে বেশি বেশি। জীবনে সফল হতে হলে সবসময় আমাদের সৃজনশীল মানুষ হওয়ার চেষ্টা করতে হবে। মেধাবী হওয়ার চেয়ে সৃজনশীল হওয়া অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অনেক মেধাবী  আছে যারা কর্মজীবনে এতটা সফল হয় নি সৃজনশীলতা না থাকার কারনে। আবার অনেক খারাপ ছাত্র রয়েছে, যাদের কোন ডিগ্রি নেই, কিন্তু সৃজনশীলতার কারনে  তারা সফলতার শীর্ষে অবস্থান করছে। তাই মেধাবী ছাত্র হওয়ার চেয়ে সৃজনশীল ছাত্র হওয়া বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বের সকল সফল মানুষদের একটি কমন অভ্যাস হচ্ছে তারা অনেক বই পড়ে। বিল গেটস এখনো প্রতি সাপ্তাহে একটি বই পড়ে। ওয়ারেন বাফেট দিনের বেশিরভাগ সময় কাটান বই পড়ে। আপনি যখন নিয়মিত বই পড়বেন তখন আপনার চিন্তা-শক্তি, কল্পনাশক্তি স্বাভাবিক ভাবে বেড়ে যাবে। কল্পনাশক্তি বেড়ে গেলে, উদ্ভাবনীয় কিছু করতে পারবেন।
রাষ্ট্রপতি ভাষণের মূল কথাই ছিল এমন। তিনি অনেক গুলো বক্তব্যে বলেন, জীবনের সকল পাবলিক পরীক্ষায় তিনি কোনরকমে পাস করেছেন। তবে তিনি রাজনীতি, সংসদ পরিচালনায় নিজের যোগ্যতার প্রমাণ রেখেছেন। সকল ক্ষেত্রে তিনিও সৃজনশীল নন-কারণ একজন মানুষ সবক্ষে্রে সফল হয় না। এটাই জীবন। তবে অধিকাংশ বক্ষত্রে সফল হওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
ডক্টর মুহাম্মদ কামাল উদ্দিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *