ঢাকায় সৌদি আরবের দূতাবাসে পিয়ন পদে চাকরি পেতে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর এলাকার তরুণ শিমন হোসাইন। তাঁকে নিয়োগপত্র ও দুই মাসের অগ্রিম বেতন বাবদ ৩২ হাজার টাকাও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু নিয়োগপত্র হাতে পাওয়ার পাঁচ মাস পরও চাকরিতে যোগ দেওয়ার ডাক পাননি তিনি। পরে সৌদি দূতাবাসে যোগাযোগ করে জানতে পারেন, তিনি আসলে প্রতারকদের খপ্পরে পড়েছেন।
শিমন হোসাইনের অভিযোগের ভিত্তিতে এই ‘প্রতারক চক্রে’র চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। পুলিশ বলছে, চক্রটি প্রতারণা করতে রীতিমতো সৌদি দূতাবাসের নামে ওয়েবসাইট খুলেছিল। এতে গাড়িচালক, পিয়ন, আয়া, ইমাম ও তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) কর্মকর্তাসহ আটটি পদে জনবল নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছিল।
শিমন হোসাইনের মতো ৬০ জন চাকরিপ্রার্থীর কাছ থেকে ১ থেকে ২ লাখ করে টাকা নেওয়া হয়েছে জানিয়ে সিআইডি বলছে, প্রতারণার মাধ্যমে নেওয়া মোট টাকার পরিমাণ এক কোটি ছাড়িয়ে যাবে।
গ্রেপ্তার চার ব্যক্তি হলেন জাহাঙ্গীর হোসেন (৫০), নুরুন নবী ওরফে সজীব (৩২), শেখ শাফায়াত হোসেন (৩১) ও আবু বক্কর সিদ্দিক (৩০)। তাঁদের ১৯ ডিসেম্বর রাজধানীর বাড্ডা ও কুমিল্লা থেকে সিআইডি গ্রেপ্তার করে। এর আগে চক্রটির ছয় সদস্যের নাম উল্লেখ করে এবং আরও ১২ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে গত বুধবার রাজধানীর ভাটারা থানায় মামলা করেন ভুক্তভোগী শিমন হোসাইন। তিনি বলেন, ‘নিয়োগপত্রের সঙ্গে যখন দুই মাসের বেতন অগ্রিম দেওয়া হয়েছিল, তখনই আমার সন্দেহ হয়। পরে তাঁরা আমার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।’
সিআইডি ও ভুক্তভোগীদের দাবি, এই চক্র এক বছর ধরে প্রতারণা করে আসছিল। তারা যে ওয়েবসাইট খুলেছিল, সেটি দেখে বোঝার উপায় নেই যে এটি ভুয়া। ওয়েবসাইটটি খুললেই সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, রাষ্টদূতের ছবি ও দেশটির রাষ্ট্রীয় প্রতীক দেখা যেত।
সৌদি দূতাবাসের এক কর্মকর্তার বাসায় একসময় বাবুর্চি হিসেবে কাজ করা জাহাঙ্গীর হোসেন নামের এক ব্যক্তি এই চক্রের মূল হোতা বলে সিআইডি সূত্র জানিয়েছে। সূত্রটি আরও বলছে, জাহাঙ্গীর যেভাবে নিয়োগপত্র পেয়েছিলেন, ঠিক একই রকম নিয়োগপত্র তৈরি করে চাকরিপ্রার্থীদের দিতেন। ভুয়া নিয়োগপত্র ও পরিচয়পত্র বা আইডি কার্ড তৈরি করে দিতেন চক্রের আরেক সদস্য নুরুন নবী ওরফে সজীব। তিনি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনা করে চাকরি করছিলেন। করোনাকালে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ওই চাকরি চলে যাওয়ায় গ্রামের বাড়ি কুমিল্লায় চলে যান। সেখানে গিয়ে জড়িয়ে পড়েন এই চক্রের সঙ্গে।
সিআইডি সূত্র আরও জানিয়েছে, চক্রটির অন্য সদস্যদের মধ্যে শেখ শাফায়েত হোসেন, আবু বক্কর সিদ্দিক, সৈকত হোসেন ও রবি পল গমেজ চাকরি দেওয়ার কথা বলে বিভিন্ন এলাকা থেকে লোক সংগ্রহ করতেন। তাঁরা চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তা তুলে দিতেন চক্রের মূল হোতা জাহাঙ্গীর হোসেনের কাছে। পরে এই টাকা নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নিতেন। টাকার সিংহভাগ পেতেন চক্রের হোতা জাহাঙ্গীর হোসেন ও তাঁর ছেলে সৈকত হোসেন।
সিআইডির অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক কামরুল আহসান বলেন, চক্রের বাকি সদস্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।