প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী, জেএসএসি ও এইচএসসি পরীক্ষা বাতিলের পর এবার স্কুলেও বার্ষিক পরীক্ষা ছাড়াই ‘অন্য কোনো উপায়ে’ শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করে ওপরের শ্রেণিতে ‘প্রমোশনের’ চিন্তাভাবনা করছে সরকার। স্কুলের মূল্যায়নটি কীভাবে হবে, সেটি সামনের সপ্তাহেই জানানো হবে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
অন্যদিকে সরাসরি এইচএসসি পরীক্ষা না নিয়ে জেএসসি, এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষার গড় ফলের ভিত্তিতে মূল্যায়নের সিদ্ধান্তে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে উচ্চমাধ্যমিকের দুই বছরের পড়াশোনার বিষয়ে কোনো মূল্যায়ন না থাকায় ভবিষ্যতে শিক্ষার্থীদের ওপর তার প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছেন শিক্ষাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কেউ কেউ। এ সিদ্ধান্তে অনেক পরীক্ষার্থী খুশি হলেও, কেউ কেউ অসন্তুষ্টও হয়েছে। এ সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য এক পরীক্ষার্থীর পক্ষে সরকারকে আইনি নোটিশও দেওয়া হয়েছে।

করোনাভাইরাসের কারণে গত ১৭ মার্চ থেকে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি চলছে। সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত এ ছুটি আছে। দীর্ঘ ছুটিতে দেশের প্রায় চার কোটি শিক্ষার্থীর পড়াশোনা ক্ষতির মুখে পড়েছে। করোনা পরিস্থিতি কবে নিয়ন্ত্রণে আসবে, তা কেউ বলতে পারছে না। এমন পরিস্থিতিতে প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা, জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা এবং সর্বশেষ গত বুধবার এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা না নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সরকারের চিন্তা ছিল, যদি অক্টোবর বা নভেম্বরেও বিদ্যালয় খোলা সম্ভব হত, তাহলে পাঠ্যসূচি কাটছাঁট করে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে কোনোরকমে একটি মূল্যায়ন পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপরের শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করা। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর এবং ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের একাধিক কর্মকর্তা মনে করছেন, করোনার যে পরিস্থিতি তাতে নভেম্বরেও বিদ্যালয় খোলা সম্ভব হবে না। এমন পরিস্থিতিতে স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা না নিয়ে গত ১৬ মার্চ পর্যন্ত আড়াই মাসের ক্লাসসহ আরও অন্যান্য কিছু বিষয়ের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করে ওপরের শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করা হতে পারে।
এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, এখন পরীক্ষা নেওয়ার মতো অবস্থা নেই। তাই কীভাবে মূল্যায়নটি করা হবে, সেটি সামনের সপ্তাহে জানানো হবে।

এইচএসসির মূল্যায়ন যেভাবে
সরাসরি পরীক্ষা না নিয়ে জেএসসি, এসএসএসি ও সমমানের পরীক্ষার গড় ফলের ভিত্তিতে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থীদের মূল্যায়নের ঘোষণার পর এখন কয়েকটি বিষয় মাথায় রেখে মূল্যায়নের প্রক্রিয়াটি শুরু করেছে শিক্ষা বোর্ডগুলো।
যে ছাত্রছাত্রীরা জেএসসি ও এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছিল, তারা এইচএসসিতেও জিপিএ-৫ পাবে। আবার কেউ জেএসসিতে জিপিএ-৫ পেল, কিন্তু এসএসসিতে জিপিএ-৪ .৫০ পেলে সেই শিক্ষার্থীর ফল জিপিএ-৫ হবে না। তবে জিপিএ-৪.৫-এর নিচে হবে না। আর বিষয়ভিত্তিক ফল নির্ধারণে জেএসএসি, এসএসসি ও এইচএসসি পর্যায়ের বিষয়ভিত্তিক ‘ম্যাপিং’ করা হবে। অর্থাৎ এই তিন পর্যায়ে যে বিষয়গুলোর মিল আছে, সেগুলোকে একভাবে দেখা হবে।

তবে এ প্রক্রিয়ায় মূল্যায়ন নিয়ে কিছু প্রশ্নও উঠেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিক্ষক প্রথম আলোকে বলেন, করোনার বাস্তবতায় এইচএসসি পরীক্ষা হয়তো সম্ভব নয়। কিন্তু মূল্যায়নটি যেভাবে হচ্ছে, তাতে ভবিষ্যতে প্রভাব পড়তে পারে। কারণ, এখানে উচ্চমাধ্যমিক স্তরের কোনো মূল্যায়ন হচ্ছে না। অথচ উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) দেওয়া হয় উচ্চমাধ্যমিকের পড়াশোনার মূল্যায়ন করে। তাঁর পরামর্শ, সরকার যেটি করতে পারত, তা হলো উচ্চমাধ্যমিকের নির্বাচনী পরীক্ষার ফলকে গণনায় নিয়ে কলেজের মাধ্যমেই শিক্ষার্থীদের বিষয়ভিত্তিক ফল তৈরি করে বোর্ডে আনা। এর সঙ্গে প্রয়োজনে এসএসসির ফলকে বিবেচনায় নেওয়া যেত। এতে এইচএসসির ফল নিয়ে প্রশ্ন থাকত না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক এস এম হাফিজুর রহমান বলেন, হঠাৎ এ রকম সিদ্ধান্ত হবে, তা কেউ আশা করেনি। এইচএসসি ওপর কিন্তু দেশে-বিদেশে উচ্চশিক্ষায় ভর্তির বিষয় জড়িত। তিনি মনে করেন, এ বিষয়ে আরও কিছু করার সুযোগ ছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *