জামিনে মুক্ত কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর অভিযোগ অনুযায়ী, আনুষ্ঠানিক গ্রেপ্তারের আগে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে তাঁকে নির্যাতন করা হয়। এর ফলে অসুস্থ হয়ে পড়লেও মনোবল হারাননি কিশোর। তবে তাঁর কানের আঘাত নিয়ে বেশি উদ্বেগে আছে পরিবার।

কার্টুনিস্ট কিশোরের ভাই আহসান কবির গতকাল শুক্রবার এ কথা জানান। তিনি বলেন, ঢাকার একটি হাসপাতালে কিশোরের চিকিৎসা চলছে। চিকিৎসকদের পরামর্শে তাঁর অনেকগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে হবে। নির্যাতনে কিশোরের এক কান বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নির্যাতনের কারণে আরও কিছু শারীরিক সমস্যা তৈরি হয়েছে। এর বাইরে রয়েছে অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস।

কার্টুনিস্ট কিশোর, লেখক ও উদ্যোক্তা মুশতাক আহমেদ, রাষ্ট্রচিন্তার সদস্য দিদারুল ইসলাম ভূঁইয়া ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক পরিচালক মিনহাজ মান্নানসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে গত ৫ মে রমনা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করে র্যাব-৩। এর মধ্যে দিদারুল ও মিনহাজ এর আগে জামিনে মুক্তি পান। মুশতাক ২৫ ফেব্রুয়ারি রাতে কারাগারে মারা যান। এরপর কিশোর উচ্চ আদালত থেকে জামিন পান। গত বৃহস্পতিবার তিনি কাশিমপুর কারাগার থেকে বের হন। পরে তাঁকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর গত বৃহস্পতিবার আহমেদ কবির কিশোর দেওয়া সাক্ষাৎকারে অভিযোগ করেন, ৫ মে গ্রেপ্তার দেখানো হলেও এর ৬৯ ঘণ্টা আগে ২ মে কাকরাইলের বাসা থেকে তাঁকে ধরে নিয়ে যায় কিছু ব্যক্তি। অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে তাঁর ওপর নির্যাতন চালানো হয়। এ সময় তিনি দুই পায়ে আঘাতের চিহ্ন দেখান। কানে যে পুঁজ বের হচ্ছিল, সেটাও দেখান। হালকা–পাতলা গড়নের কিশোর কারাগারে ওজন হারান অনেক। কারাগারে সুচিকিৎসা পাননি বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

গত বুধবার হাইকোর্টে জামিন আবেদনে কার্টুনিস্ট কিশোরের শারীরিক অসুস্থতার কথা আদালতকেও জানান তাঁর আইনজীবী।

মুশতাকের জন্য দোয়া

এদিকে একই মামলার অপর আসামি প্রয়াত মুশতাক আহমেদের জন্য গতকাল দোয়ার আয়োজন করে তাঁর পরিবার। মুশতাক আহমেদের স্বজন চিকিৎসক রিয়াসাত আলম বলেন, মুশতাক আহমেদের পরিবারের সদস্যরা তাঁদের লালমাটিয়ার বাসা ‘পরম্পরায়’ দোয়ায় অংশ নেন। বাইরে থাকা স্বজনেরা ভার্চ্যুয়ালি দোয়ায় অংশ নেন। তিনি জানান, মুশতাকের শোকাহত বাবা মো. আবদুর রাজ্জাক, মা জেবুন্নেসা রাজ্জাক ও স্ত্রী লিপা আক্তার বিপর্যস্ত অবস্থায় আছেন। কিছুতেই তাঁরা মুশতাকের এ মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না।

মুশতাক গত ২৫ ফেব্রুয়ারি রাতে মারা যান। কারাগার কর্তৃপক্ষ জানায়, ওই দিন গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়েন মুশতাক আহমেদ। সেখান থেকে শহীদ তাজউদ্দীন মেডিকেল কলেজে পাঠানো হলে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

সংশোধনী

গতকাল শুক্রবার প্রথম আলোয় কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোরের ছবির নিচের ক্যাপশনে ‘কারাগারে নির্যাতনের কথা বর্ণনা করতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর’ লেখা হয়। প্রকৃতপক্ষে তিনি অজ্ঞাত স্থানে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্যাতনের কথা বলেন। অসাবধানতাবশত অজ্ঞাত স্থানের স্থলে কারাগার লেখা হয়েছে। অনিচ্ছাকৃত এ ভুলের জন্য আমরা দুঃখিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *